Skip to main content

সূরা আলে-ইমরান এর (১-৬) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: আল্লাহর একাত্ববাদের প্রমাণ।

By দৈনিক তাফসীর No Comments

الم (1) اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ (2) نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ (3) مِنْ قَبْلُ هُدًى لِلنَّاسِ وَأَنْزَلَ الْفُرْقَانَ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ (4) إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ (5) هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (6) [سورة آل عمران: 1-6]

আয়াতাবলীর আলোচ্য বিষয়: আল্লাহর একাত্ববাদের দলীল।

আয়াতাবলীর সরল অনুবাদ:
(১) আলিফ লা-ম মী-ম।
(২) আল্লাহ, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই; তিনি চিরঞ্জীব, চির প্রতিষ্ঠিত ধারক।
(৩) তিনি তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যথাযথভাবে, এর পূর্বে যা এসেছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে এবং নাযিল করেছেন তাওরাত ও ইনজীল।
(৪) ইতঃপূর্বে মানুষের জন্য হেদায়েত স্বরুপ। আর তিনি ফুরক্বান নাযিল করেছেন। নিশ্চয় যারা অস্বীকার করে আল্লাহর আয়াতসমূহ, তাদের জন্যই রয়েছে কঠিন আযাব। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধগ্রহণকারী।
(৫) নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকঠ গোপন থাকে না কোন কিছু যমীনে এবং না আকাশে।
(৬) তিনি এমন সত্বা, যিনি মার্তৃগর্ভে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন যেভাবে তিনি চান, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

আয়াতাবলীর ভাবার্থ:
নাজরান থেকে একদল খ্রীষ্টান রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে তর্কবিতর্কের মাধ্যমে ঈসা (আ.) এর জন্য উলুহিয়্যাহ সাব্যস্ত করতে চাইলে আল্লাহ তায়ালা জিবরীল (আ.) এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহকে (সা.) জানিয়ে দিলেন: আলিফ লা-ম মী-ম। আল্লাহই হলেন একমাত্র ইলাহ বা মাবূদ, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন মাবূদ নেই। এর স্বপক্ষে দলীল হলো:
(ক) আল্লাহ তায়ালা চিরঞ্জীব এবং সৃষ্টি জগতের চির প্রতিষ্ঠিত ধারক ও ব্যাবস্থাপক হওয়ার কারণে একমাত্র তিনিই মাবূদ হওয়ার যোগ্য। ঈসা (আ.) এর মধ্যে অত্র গুণটি না থাকার কারণে সে মাবূদ হওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
(খ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যথাযথভাবে, যা কখনও কোন ধরণের বাতিলের ছোয়া পায়নি এবং তা মূসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া তাওরাত ও ঈসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া ইনজীল সহ পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের উপর সত্যায়নকারী। এ কোরআনই একমাত্র আল্লাহকেই সর্বদা মাবূদ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
(গ) তিনি এমন সত্বা, যিনি মার্তৃগর্ভে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন যেভাবে তিনি চান, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আর ঈসা (আ.) তার মা মারইয়ামের গর্ভে আল্লাহর ইশারায় সৃষ্টি হয়েছে। এমন গুণের মানুষ কখনও ইলাহ হতে পারে না এবং ইলাহের পুত্রও হতে পারে না।
(ঘ) নিশ্চয় আল্লাহ, আকাশ এবং যমীনের কোন কিছু তাঁর নিকট গোপন থাকে না। আর ঈসা (আ.) সব জায়গার খোজ খবর রাখতে পারতো না। সুতরাং সে ইলাহ হতে পারে না এবং ইলাহের পুত্রও হতে পারেন না।
আর আল্লাহ তায়ালা ফুরক্বান নাযিল করেছেন, যা হক্ক বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী। কোরআন বলেছে: আল্লাহ হলেন প্রথম, যার পূর্বে কিছুই ছিল না, তিনিই শেষ যার পরে কিছু বাকী থাকবে না। তিনি সবাইকে রিযক দেন এবং কারো প্রতি মুখাপেখী নয়, অপরদিকে ঈসা (আ.) সহ সৃষ্টিকুলের সবকিছু তাঁর প্রতি মুখাপেখী। নিশ্চয় যারা আল্লাহর একাত্ববাদ সম্পর্কিত আয়াতাবলীকে অস্বীকার করে এবং অন্য কাউকে তাঁর সাথে ইলাহ হিসেবে শরীক করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধগ্রহণকারী। (আইসার আল-তাফাসীর: ১/২৮৪, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫০, আল-মোন্তাখাব: ৭০) ।

আয়াতাবলীর অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
(الم) ‘আলিফ লা-ম মী-ম’, এগুলোকে ‘হুরূফ আল-মুক্বাত্তায়াত’ বলা হয়। কোরআন মাজীদের ২৯টি সূরা এ হুরূফ দিয়ে শুরু হয়েছে। প্রথম সূরা হলো ‘সূরা বাক্বারা’ এবং সর্বশেষ সূরা হলো ‘সূরা ক্বলাম’। যেহেতু এ মুকাত্তায়াত হুরূফের কোন ব্যাখ্যা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) থেকে আসেনি, সেহেতু এগুলোকে মুতাশাবিহ আয়াতের অন্তর্ভূক্ত ধরা হয়। এজন্য সকল তাফসীর গ্রন্থে মুকাত্তায়াত হরফগুলোর তাফসীর না করে ‘এ সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন’ বলা হয়েছে। তবে কোন কোন তাফসীরকারক এগুলো সূরার শুরুতে উল্লেখ করার দুইটি উপকারিতা বর্ণনা করেছেন:
(ক) যখন মুশরিকরা কোরআনের আকর্ষণের ভয়ে তা শোনা থেকে বিরত থাকতো, তখন আল্লাহ তায়ালা কোরান মাজীদের সূরাগুলোকে বিচ্ছিন্ন হরফ দিয়ে শুরু করার মাধ্যমে তার ছন্দের মধ্যে নতুনত্ব আনয়নের কারণে তারা কোরআন শোনার প্রতি আগ্রহী হয়েছে। ফলে, তাদের অনেকেই কোরআন শুনে তার প্রতি ঈমান গ্রহণ করেছে।
(খ) মুশরিকরা কোরআন মাজীদকে আল্লাহর বাণী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করতো। আল্লাহ তায়ালা কোরআনের সূরাগুলো কিছু বিচ্ছিন্ন অক্ষর দিয়ে শুরু করার মাধ্যমে তাদেরকে জানিয়ে দিলেন যে, তোমরা যে কোরআনকে অস্বীকার করছো, তা অনুরুপ অক্ষর দিয়েই গঠিত হয়েছে। কোরআনকে আল্লাহর বাণী হিসেবে মেনে নিতে তোমাদের যদি কোন আপত্তি থাকে তাহলে এ ধরণের অক্ষরসমূহ দিয়ে তোমরাও অনুরুপ একটি কোরআন অথবা এর ছোট একটি সূরার মতো একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আসো। (আইসার আল-তাফসীর: ১/১৮-১৯) ।
(الْكِتَابَ) ‘কিতাব’, সকল তাফসীরকারন একমত যে, ‘কিতাব’ দ্বারা ‘কোরআন’ কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
(الْفُرْقَانَ) ‘আল-ফুরক্বান’, আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? এ ব্যাপারে তাফসীরকারকদের থেকে দুইটি মত পাওয়া যায়:
(ক) ‘ফুরক্বান’ দ্বারা ‘কোরআন’ কে বুঝানো হয়েছে। (আইসার আল-তাফাসীর: ১/২৮৩) ।
(খ) ‘ফুরক্বান’ দ্বারা পূর্ববর্তী যুগের সকল আসমানী কিতাবকে বুঝানো হয়েছে; কারণ তিন নাম্বার আয়াতে প্রথমে ‘কিতাব’ বলে কোরআনের কথা বলে পরে ‘তাওরাত’ ও ‘ইনজীল’ কে উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর চার নাম্বার আয়াতে ‘ফুরক্বান’ শব্দ দিয়ে পূর্ববর্তী যুগের সকল আসমানী কিতাবকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩/১৪৫) ।

আয়াতাবলী অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
ইমাম সুয়ূতী (র.) তার লুবাব গ্রন্থে রবী (র.) এবং মোহাম্মদ ইবনু সাহ্ল (র.) এর রেওয়ায়েতে উল্লেখ করেছেন যে, নাজরান থেকে একটি খৃষ্টান প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে ঈসা (আ.) এর ব্যাপারে তর্কে লিপ্ত হলে আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার প্রথম ৮০টি আয়াত অবতীর্ণ করে ঈসা (আ.) এর হাকীকাত এর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য বিশ্ব বাসীকে জানিয়ে দিলেন। (লুবাব আল-নুক‚ল, আল-সুয়ূতী: ৬০) ।
ইমাম ওয়াহেদী (র.) বলেছেন, তাফসীরকারকগণ বলেন: নাজরান থেকে ষাট জনের একটি খৃষ্টান প্রতিনিধি দল আছরের সালাতের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে আগমণ করলেন। তাদের সকলেই নাযরানের নের্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। কতিপয় সাহাবী বলছিলেন এমন প্রতিনিধিদল আর কখনও দেখিনি। তারা মাসজিদে নবভীর ভিতরে সালাত আদায়ের জন্য দাড়ালে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদেরকে বললেন: তাদেরকে সালাত আদায় করতে দাও। অতঃপর তারা পূর্ব দিকে মুখ করে সালাত আদায় করলো। সালাতের পরে তাদের মধ্য থেকে দুই জন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে কথা বলতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন তাদের মধ্যে কথোপকথন হলো:
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো।
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: আমরা তোমার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা মিথ্যা বলেছো; কারণ তোমরা আল্লাহর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করছো, ক্রুসের ইবাদত করছো এবং শুকরের গোস্ত ভক্ষণ করছো, যা ইসলামের পথে বাধা।
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: ঈসা আল্লাহর পুত্র না হয়ে থাকলে তার পিতার নাম কি?
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে পুত্র সাধারণত পিতার মতো হয়?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে আল্লাহ তায়ালা চিরঞ্জীব, তিনি কখনও মৃতবরণ করবেন না, অথচ ঈসা (আ.) একদিন মরে যাবেন?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি জগতের চির প্রতিষ্ঠিত ধারক ও ব্যাবস্থাপক?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): ঈসা (আ.) কি উল্লেখিত একটির ব্যাপারেও ক্ষমতা রাখেন?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: না।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে আল্লাহ তায়ালা আহার ও পানাহার করেন না এবং তিনি ঈসা (আ.) কে মার্তৃগর্ভে তাঁর ইচ্ছমতো আকৃতি দান করেছেন?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে ঈসা এর মা তাকে আরো দশ নারীর মতোই তাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, তাকে প্রসব করেছেন এবং অসহায় অবস্থায় তাকে আদরযতœ করে বড় করে তুলেছেন?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): এতকিছু জানার পরেও তোমরা কিভাবে ঈসা (আ.) কে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করছো? এতে তারা সকলে চুপ হয়ে গেলো। তখন আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার প্রথম ৮০টি আয়াত অবতীর্ণ করে ঈসা (আ.) এর হাকিকত সম্পর্কে স্ববিস্তারে আলোচনা করেছেন। (আসবাব আল-নুযূল, ওয়াহেদী: ১০০) ।

আয়াতাবলীর শিক্ষা:
১। অত্র সূরার (১-৬) নাম্বার আয়াতে খৃষ্টানদের ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসের অসারতা তুলে ধরার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের স্বপক্ষে চারটি প্রমাণ পেশ করা হয়েছে:
(ক) দুই নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা চিরঞ্জীব এবং সৃষ্টি জগতের চির প্রতিষ্ঠিত ধারক ও ব্যাবস্থাপক হওয়ার কারণে একমাত্র তিনিই মাবূদ হওয়ার যোগ্য। ঈসা (আ.) এর মধ্যে অত্র গুণটি না থাকার কারণে সে মাবূদ হওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
(খ) (৩-৪) নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যথাযথভাবে, যা কখনও কোন ধরণের বাতিলের ছোয়া পায়নি এবং তা মূসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া তাওরাত ও ঈসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া ইনজীল সহ পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের সত্যায়নকারী। এ কোরআনই তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।
(গ) পাঁচ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, আকাশ এবং যমীনের কোন কিছুই আল্লাহ তায়ালার নিকট গোপন থাকে না। আর ঈসা (আ.) সব জায়গার খোজ খবর রাখতে পারতো না। সুতরাং সে ইলাহ হতে পারে না এবং ইলাহের পুত্রও হতে পারেন না।
(ঘ) ছয় নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি এমন সত্বা, যিনি মার্তৃগর্ভে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সকল প্রাণীর আকৃতি গঠন করেন, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আর ঈসা (আ.) তার মা মারইয়ামের গর্ভে আল্লাহর ইশারায় সৃষ্টি হয়েছে। এমন গুণের মানুষ কখনও ইলাহ হতে পারে না এবং ইলাহের পুত্রও হতে পারে না। (তাফসীর আল-মুনীর, ওহাবা আল-জুহাইলী: ৩/১৪৮) ।
২। তিন নাম্বার আয়াতের শেষাংশে কাফির মুশরিকদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যে, নিশ্চয় যারা আল্লাহর একাত্ববাদ সম্পর্কিত উল্লেখিত প্রমাণসমূহকে অস্বীকার করবে এবং অন্য কাউকে তাঁর সাথে ইলাহ হিসেবে শরীক করবে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব। (তাফসীর সা’দী: ১২১) ।
৩। তিন এবং চার নাম্বার আয়াতে দেখা যায়, ‘কোরআন’ অবতীর্ণের ক্ষেত্রে ‘বাবে তাফয়ীল’ এর সীগাহ এবং তাওরাত-ইনজীল সহ পূর্ববর্তী যুগের আসমানী কিতাবের ক্ষেত্রে ‘বাবে ইফয়াল’ এর সীগাহ ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হতে পারে, ‘কোরআন’ এর ক্ষেত্রে ‘বাবে তাফয়ীল’ এর শব্দ এবং অন্যান্য আসমানী গ্রন্থের ক্ষেত্রে কেন ‘বাবে ইফয়াল’ এর শব্দ ব্যবহার করা হলো?
এর উত্তরে তাফসীরকারকগণ বলেন, ‘বাবে তাফয়ীল’ এর একটি খাসিয়াত হলো: ‘তাকসীর’ বা অধিক সংখ্যা বুঝানো এবং ‘বাবে ইফয়াল’ একটি খাসিয়াত ‘তাকলীল’ বা কম সংখ্যা বুঝানো। কোরআন মাজীদ দীর্ঘ ২৩ বছরের বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন স্থানে এবং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে, তাই তার ক্ষেত্রে ‘বাবে তাফয়ীল’ এর সীগাহ ব্যবহার করা হয়েছে। অপরদিকে তাওরাত-ইনজীল সহ অন্যান্য আসমানী কিতাব একই সময়ে এক বারে অবতীর্ণ হয়েছে, তাই তাদের ক্ষেত্রে ‘বাবে ইফয়াল’ এর সীগাহ ব্যবহার করা হয়েছে। (আল-তাহরীর ওয়া আল-তানভীর, ইবনু আশুর: ৩/১৪৮) ।

আয়াতাবলীর আমল:
(ক) আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা।
(খ) ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস (আল্লাহ, আল্লাহর পূত্র এবং আল্লাহর স্ত্রী) থেকে নিজেকে সংরক্ষণ করা। খৃষ্টানরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি, অনুদান, চিকিৎসা, ফ্রি বই বিতরণ ইত্যাদি সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুসলমানদের উচিৎ ঈমান রক্ষার তাকীদে এ সুবিধাগুলোকে পরিত্যাগ করা।

রমযান উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক তাফসীর প্রতিযোগিতা-২০২৪

By গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা No Comments

“A Verse in A Day”, “সবার জন্য তাফসীর শিক্ষা” এ স্লোগানকে সামনে রেখে দৈনিক একটি আয়াতের সংক্ষিপ্ত সহজবোধ্য ব্যাখ্যা, শিক্ষা এবং আমল মৌখিক, লৈখিক এবং আধুনিক সকল প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে সকল পেশাজীবী নারী-পুরুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। বিগত বছর যে তাফসীর শেয়ার করা হয়েছে তার আলোকে প্রতি বছর রমযান মাসে একটি আন্তর্জাতিক তাফসীর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ঈদ পুনর্মিলনী এবং পুরস্কার বিতরণী উপলক্ষ্যে একটি জমকালো প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাৎসরিক কার্যক্রমের সমাপ্তি এবং নুতন বছরের পরিকল্পনা ঘোষণার মাধ্যমে পরবর্তী বছরের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এভাবে ২০২২ থেকে চলে আসছে। এরই ধারাবহিকতায় এ বছরও “A Verse in A Day” আন্তর্জাতিক তাফসীর প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এতদসংশ্লিষ্ট বিস্তারিত তথ্য নিম্নে:

প্রতিযোগিতার পুরস্কার:

প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান বিজয়ী সহ প্রথম ১০ জনের জন্য রয়েছে লক্ষাধিক টাকা পুরস্কার। এছাড়াও বিজয়ীদেরকে আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

গুরুত্বপূর্ণ তারিখসমূহ: 

উত্তর পাঠানোর শেষ তারিখ: 30/03/2024 (শনিবার)।

রেজাল্ট ঘোষণা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান: 20/04/2024 (শনিবার)।

প্রতিযোগিতার শর্তাবলী: 

১। সকল উত্তর অবশ্যই ‘A Verse in A Day’ এর তাফসীর থেকে হতে হবে।

২। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে উত্তরপত্র পাঠাতে হবে।

৩। সঠিক উত্তরদাতা একাধিক হলে, মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে স্থান নির্ধারণ হবে।

৪। একজন প্রতিযোগী একাধিক উত্তরপত্র পাঠালে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।

৫। পূর্বের প্রতিযোগিতায় ১ম, ২য় এবং ৩য় স্থান অধিকারী বিজয়ীগণ এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

৬। প্রতিযোগিতা সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে (AVAD) কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে।

 

সূরা আলে ইমরান এর পরিচয়:

By দৈনিক তাফসীর 2 Comments

সূরা আলে ইমরান এর পরিচয়:

সূরার নাম: বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থ থেকে অত্র সূরার অনেকগুলো নাম পাওয়া যায়:
(ক) আলে ইমরান (তাওকীফি নাম), সূরাটি অত্র নামেই সবার কাছে পরিচিত। এ নামটি বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ সূরায় ইমরান (আ.) এর বংশধর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তাই তার নাম আলে ইমরান রাখা হয়েছে।
(খ) জাহরা (তাওকীফি নাম) এ নামটিও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
(গ) আল-কান্জ (ইজতিহাদী নাম), আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) এ নামে নামকরণ করেছেন।
(ঘ) আল-তাইবাহ, তাওরাত গ্রন্থে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
(ঙ) সূরা আল-আমান, সূরা মু’ইনাহ, সূরা মুজাদালাহ এবং সূরা আল-ইস্তেগফার, ইমাম আবু হাইয়্যান আল-আন্দলুসী এবং ইমাম আলূসী (রহ.) তাদের তাফসীর গ্রন্থে উক্ত নামগুলো উল্লেখ করেছেন। (তাফসীর মাওজূয়ী, মোস্তফা মুসলিম: ২/৪০৩-৪০৪) ।

সূরার আলোচ্য বিষয়: আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস ও তার প্রমাণ।

সূরার ফযিলত: এ সূরার অনেকগুলো ফযিলত রয়েছে, সহীহ হাদীসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ ফযিলতগুলো হলো:
(ক) সূরা আলে ইমরান এবং সূরা বাক্বারা কিয়ামতের দিন মেঘ হয়ে পাঠককে ছায়া প্রদান করবে, আবু উমামা আল বাহিলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ، اقْرَءُوا الزَّهْرَاوَيْنِ الْبَقَرَةَ، وَسُورَةَ آلِ عِمْرَانَ، فَإِنَّهُمَا تَأْتِيَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ، أَوْ كَأَنَّهُمَا غَيَايَتَانِ، أَوْ كَأَنَّهُمَا فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ، تُحَاجَّانِ عَنْ أَصْحَابِهِمَا، اقْرَءُوا سُورَةَ الْبَقَرَةِ، فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ، وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ، وَلَا تَسْتَطِيعُهَا الْبَطَلَةُ” (صحيح مسلم: ১৯১০).
অর্থাৎ: “তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো, কারণ সে তার সাথীর নিকট কিয়ামতের দিন শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থি হবে। তোমরা সূরা বাক্বারা ও সূরা আলে ইমরান তেলাওয়াত করো, কারণ তারা কিয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খন্ড মেঘ, অথবা দুইটি ছায়াদানকারী, অথবা দুই ঝাঁক উড়ান্ত পাখি, যা পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সূরা বাক্বারা তেলাওয়াত করো, কারণ এ সূরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কাজ। আর বাতিলের অনুসারীগণ এর বিরোধিতা করতে পারে না” (সহীহ মুসলিম: ১৯১০) ।
(খ) সূরা আলে ইমরান নিয়মিত পাঠ করলে পাঠকারীর অভাব-অনটন থাকবে না, সুনান আল-দারিমীতে একটি হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন:
“مَنْ قَرَأَ آلَ عِمْرَانَ، فَهُوَ غَنِيٌّ وَالنِّسَاءُ مُحَبِّرَةٌ” (سنن الدارمي: ৩৪৩৮).
অর্থাৎ: “যে ব্যক্তি সূরা আলে ইমরান তেলাওয়াত করে, সে ধনী; এবং সূরা নিসা সৌন্দর্যবর্ধনকারী” (সুনান আল-দারিমী: ৩৪৩৮) ।
মোহাক্কেক হাসান সুলাইম আসাদ দারানী বলেন: হাদীসের সনদ ‘জাইয়্যেদ’ বা ভালো।
(গ) অত্র সূরাটি সাবউ আল-তিওয়াল বা লম্বা সাত সূরার অন্তভ‚ক্ত, আর যে ব্যক্তি এ সাতটি সূরা শিখবে, সে আলেম। আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“مَنْ أَخَذَ السَّبْعَ الأُوَلَ مِنَ الْقُرْآنِ، فَهُوَ حَبْرٌ” (مسند أحمد: ২৪৫৭৫).
অর্থাৎ: “যে ব্যক্তি কোরআনের প্রথম সাতটি সূরা শিখবে, সে আলেম হিসেবে গণ্য হবে” (মুসনাদে আহমাদ: ২৪৫৭৫) । মোহাক্কিক শোয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
উল্লেখ্য যে, কোরআনের লম্বা সাত সূরা হলো: সূরা বাক্বারা, সূরা আলে ইমরান, সূরা নিসা, সূরা মায়িদাহ, সূরা আনয়াম, সূরা আরাফ এবং সূরা তাওবাহ।
(ঘ) তাহাজ্জুদ সালাতে অত্র সূরা তেলাওয়াত করা, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদের সাত রাকায়াতে সাতটি লম্বা সূরা তেলাওয়াত করতেন। হুজাইফা (রা.) বলেন:
“قُمْتُ إِلَى جَنْبِ رَسُولِ اللهِ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَقَرَأَ السَّبْعَ الطِّوَلَ فِي سَبْعِ رَكَعَاتٍ” (مسند أحمد: ২৩৪১১).
অর্থাৎ: “আমি কোন এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পাশে সালাতে দারালাম, অতঃপর তিনি সাত রাকায়াতে সাতটি লম্বা সূরা তেলাওয়াত করলেন” (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৪১১) । মোহাক্কিক শোয়াইব আরনাউত বলেন: সনদের একজন রাভী হুজাইফার চাচা, তিনি অপরিচিত হওয়ার কারণে হাদীসটি ‘হালকা যয়ীফ’ হয়েছে।

মুসহাফে সূরাটির অবস্থান: তৃতীয় সূরা।

অবতীর্ণ হওয়ার দৃষ্টিতে সূরাটির অবস্থান: ৮৭তম সূরা, সূরা বাক্বারা এর পরে এবং সূরা আনফাল এর পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।

অবতীর্ণের স্থান: সকল মোফাসসিরের মতে, মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে, সূরা মাদানিয়্যাহ।

আয়াত সংখ্যা: ২০০টি।

অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট: অত্র সূরায় মোট একচল্লিশটি অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট রয়েছে।

সূরা আন-নাবা এর (৩৭-৪০) আয়াতের তাফসীর, আল্লাহর ক্ষমতা, কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার নিশ্চয়তা এবং কাফিরদের প্রতি সতর্কতা।

By দৈনিক তাফসীর No Comments

رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الرَّحْمَنِ لَا يَمْلِكُونَ مِنْهُ خِطَابًا (37) يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا لَا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا (38) ذَلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّ فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ مَآبًا (39) إِنَّا أَنْذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيبًا يَوْمَ يَنْظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُولُ الْكَافِرُ يَالَيْتَنِي كُنْتُ تُرَابًا (40) [سورة النبأ: 37-40]

আয়াতের আলোচ্য বিষয়:
আল্লাহর ক্ষমতা, কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার নিশ্চয়তা এবং কাফিরদের প্রতি সতর্কতা।

আয়াতের সরল অনুবাদ:
(৩৭) যিনি আকাশসমূহ, যমীন এবং এতদোভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব, পরম করুনাময়। তারা তাঁর সামনে কথা বলার সামর্থ্য রাখবে না।
(৩৮) সেদিন রুহ এবং ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে, যাকে পরম করুণাময় অনুমতি দিবেন সে ছাড়া অন্যরা কোন কথা বলবে না। আর সে সঠিক কথাই বলবে।
(৩৯) ঐ দিনটি সত্য। অতএব যে চায় সে তার রবের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করুক।
(৪০) নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে একটি নিকটবর্তী আযাব সম্পর্কে সতর্ক করলাম। যেদিন মানুষ দেখতে পাবে, তার দুই হাত কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কাফের বলবে “হায়! আমি যদি মাটি হতাম”।

সূরা আন-নাবা এর (৩৭-৪০) আয়াতের ভাবার্থ:
আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা এমন যে, তিনি হলেন আকাশসমূহ, যমীন এবং এতদোভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব, আর দুনিয়া ও আখেরাতে পরম করুনাময়। তারা তাঁর সামনে কথা বলার সামর্থ্য রাখবে না। সেদিন জিবরীল (আ.) এবং অন্যান্য ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে, যাকে পরম করুণাময় অনুমতি দিবেন সে ছাড়া অন্য কেউ কোন কথা বলতে পারবে না। আর সে সঠিক কথাই বলতে পারবে, কোন ধরণের ছলছাতরীর আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পাবে না। ঐ দিনটি সত্য, যে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। অতএব যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানের ভয়াবহতা থেকে নাজাত চায় সে যেন নেকআমলের মাধ্যমে তার রবের নিকট আশ্রয় প্রার্থণা করে। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে একটি নিকটবর্তী আযাব সম্পর্কে সতর্ক করলাম। যেদিন মানুষ তাদের ভালোমন্দ কৃতকর্ম -যা অগ্রে প্রেরণ করেছে- স্বচক্ষে দেখতে পাবে। পশু-পাখীর হিসাব গ্রহণ শেষে তাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হবে, কাফেররা পশু-পাখীর এ দৃশ্য দেখে নিজেদের হিসাব গ্রহণের ভয়াবহতার কারণে বলতে থাকবে: “হায় আফসোস! আমরাও যদি তাদের মতো মাটি হয়ে যেতাম”। (আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০৬, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫৮৩, আল-মোন্তাখাব: ৮৮০) ।

সূরা আন-নাবা এর (৩৭-৪০) আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:

(الرُّوحُ) ‘রুহ’, শব্দটি আরবী, যার অর্থ হলো: ‘আত্মা’। অত্র শব্দটি কোরআন মাজীদে মোট নয় বার এসেছে, যা দ্বারা দুইটি বিষয়কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে:
(ক) মানুষের অন্তর বা আত্মা, সূরা ইসরা এর (৮৫) নাম্বার আয়াতে (২) বার এসেছে এবং দুই বারেই এর দ্বারা মানুষের ভিতরে নিহিত আত্মাকে বোঝানো হয়েছে।
(খ) জিবরীল (আ.), কোরআন মাজীদে সাত বার ‘রুহ’ শব্দটি দিয়ে জিবরীলকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যেমন: সূরা শুয়ারা এর (১৯৩) নাম্বার আয়াত, সূরা গাফির এর (১৫) নাম্বার আয়াত, সূরা আন-নাবা এর (৩৮) নাম্বার আয়াত, সূরা নাহল এর (২) নাম্বার ও (১০২) নাম্বার আয়াত, সূরা মায়রিজ এর (৪) নাম্বার আয়াত এবং সূরা ক্বাদ্র এর (৪) নাম্বার আয়াত। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
(لَا يَمْلِكُونَ) ‘তারা সক্ষম হবে না’ এবং (لَا يَتَكَلَّمُونَ) ‘তারা কথা বলতে পারবে না’ ক্রিয়া দুইটির সর্বনামদ্বয় দ্বারা ‘মানবজাতি’কে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আয়াতের হবে: “মানবাজতি কিয়ামতের দিন আল্লাহর ভয়ে তাঁকে সম্বোধন করতে সক্ষম হবে না/ কিয়ামতের দিন মানবজাতি তাঁর অনুমতি ছাড়া কোন কথা বলতে পারবে না”। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/২৬) ।

সূরা আন-নাবা এর (৩৭-৪০) আয়াতের সাথে পূর্ববর্তী আয়াতের সম্পর্ক:

পূর্ববর্তী আয়াতাবলী তথা (৩১-৩৬) নাম্বার আয়াতে কিয়ামতের দিন মোত্তাকীদের পুরস্কারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। আর অত্র আয়াতাবলী তথা (৩৭-৪০) নাম্বার আয়াতে কিয়ামতের দিনের আল্লাহর ক্ষমতা, কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার নিশ্চয়তা এবং কাফিরদের প্রতি সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং পূর্বের আয়াতের সাথে অত্র আয়াতাবলীর সম্পর্ক সুস্পষ্ট। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/২৬) ।

সূরা আন-নাবা এর (৩৭-৪০) আয়াতের শিক্ষা:
১। অত্র সূরার (৩৭-৩৮) নাম্বার আয়াত থেকে বুঝা যায় কিয়ামতের দ্বিন আল্লাহ তায়ালার সামনে তার ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস করবে না। তবে দুইটি শর্তে মানুষ আল্লাহর সামনে কথা বলতে পারবে:
(ক) আল্লাহ কথা বলার অনুমতি প্রদান করলে।
(খ) অনুমতি পাওয়ার পর কেবল সত্য কথা বলতে পারবে। এ সম্পর্কে কোরআন মাজীদের সূরা হুদ এবং সূরা ত্বহা এ দুইটি আয়াত পাওয়া যায়। সূরা হুদ এ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
(يَوْمَ يَأْتِ لا تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ) [سورة هود: ১০৫].
অর্থাৎ: “এমন একটি দিন আসছে, যে দিন তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কোন কথা বলতে পারবে না” (সূরা হুদ: ১০৫) । অনুরুপভাবে সূরা ত্বহা এ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
(يَوْمَئِذٍ لا تَنْفَعُ الشَّفاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا) [سورة طه: ১০৯].
অর্থাৎ: “সেদিন কারো কোন সুপারিশই কাজে আসবে না, অবশ্য যাকে করুণাময় আল্লাহ তায়ালা অনুমতি দিবেন এবংযার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন, তার ব্যাপার আলাদা” (সূরা ত্বহা: ১০৯) । (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/২৭) ।
২। উনচল্লিশ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, কিয়ামত সত্য, তা অবশ্যই সংগঠিত হবে, এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। সুতরাং যারা সেদিন নাজাত পেতে চায়, তারা যেন ঈমান গ্রহণ পূর্বক সৎআমল করে।
৩। চল্লিশ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তিনটি পন্থা অবলম্ভন করে কাফির-মুশরিকদেরকে কিয়ামতের দিন সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন যে:
(ক) কিয়ামতের আযাব খুবই কাছে, আমি তোমাদেরকে নিকটবর্তী আযাব সম্পর্কে সতর্ক করেছি। এছাড়াও কোরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে কিয়ামতকে নিকটবর্তী বলা হয়েছে। যেমন: সূরা নাযিয়াত এর (৪৬) নাম্বার আয়াত, সূরা হাশর এর (১৮) নাম্বার আয়াতে কিয়ামতের দিনকে আগামী কাল বলা হয়েছে।
(খ) কিয়ামতের দিন সকলে নিজের ভালোমন্দ কৃতকর্ম স্বচক্ষে দেখতে পাবে, যেদিন মানুষ নিজের পূর্ব প্রেরিত আমলের দিকে তাকিয়ে থাকবে। এছাড়াও সূরা আলে ইরমান এর (৩০) নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: প্রত্যেকে সেদিন নিজের ভালোকর্ম কাছে উপস্থিত পাবে, আর যারা খারাপ কাজ করেছে, তারা তাদের আমল থেকে দুরে সরে যেতে চাইবে।
(গ) কাফিররা সেদিন নিজেদের ভয়াবহ পরিণতি দেখে মাটি হওয়ার বাসনা পেশ করবে, এছাড়াও কোরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে সেদিন কাফিররা দুনিয়ায় পুণরায় ফিরে আসতে চাইবে, কেউ কেউ নিজেদের উপর অভিশাপ দিবে, আবার কেউ কেউ নিজের নেতৃবৃন্দের প্রতি অভিশাপ দিবে। কিন্তু কোন কিছুতেই তারা আর রক্ষা পাবে না।
৪। অত্র সূরার শেষের দুই আয়াত তথা (৩৯-৪০) নাম্বার আয়াত থেকে বুঝা যায় কিয়ামতের দিন মানবজাতি দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে: (ক) একদল মুমিন, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ধন্য হবে, (খ) আরেক দল কাফের, তারা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়ে ধ্বংস হবে। (আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন) ।

আয়াতাবলীর আমল:
(ক) পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান এনে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(খ) আল্লাহ তায়ালার মহা পুরস্কারের আশায় বেশী বেশী নেকআমল করা।

সূরা আন-নাবা এর (৩১-৩৬) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: কিয়মতের দিন সৌভাগ্যবান মুমিনদের প্রতিদান।

By দৈনিক তাফসীর No Comments

إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا (31) حَدَائِقَ وَأَعْنَابًا (32) وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا (33) وَكَأْسًا دِهَاقًا (34) لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا كِذَّابًا (35) جَزَاءً مِنْ رَبِّكَ عَطَاءً حِسَابًا (36) [سورة النبأ: 31-36]

আয়াতের আলোচ্য বিষয়: কিয়মতের দিন সৌভাগ্যবান মুমিনদের প্রতিদান।

আয়াতের সরল অনুবাদ:

(৩১) নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা।
(৩২) উদ্যানসমূহ এবং আঙ্গুরসমূহ।
(৩৩) এবং সমবয়স্কা উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী।
(৩৪) আর পরিপূর্ণ পানপাত্র।
(৩৫) সেখানে তারা কোন অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না।
(৩৬) তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রতিফল, যথোচিত দানস্বরুপ।

আয়াতের ভাবার্থ:

নিশ্চয় যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করে তারা জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে স্থায়ী জান্নাত লাভের মাধ্যমে মহাসফলতা লাভ করবেন। সেখানে তাদের আরাম-আয়েসের জন্য ফুলে-ফলে সুশোভিত উদ্যানসমূহ রয়েছে এবং খাবার হিসেবে রয়েছে সুঘ্রানযুক্ত আঙ্গুরসমূহ। এবং উপভোগের জন্য রয়েছে সমবয়স্কা উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী। এছাড়াও পানীয় হিসেবে রয়েছে পরিপূর্ণ স্বচ্ছ পানপাত্র, যা অনবরত থাকবে। সেখানে তারা কোন অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না। উল্লেখিত পুরস্কারগুলো তাদের রবের পক্ষ থেকে প্রতিফল এবং যথোচিত দানস্বরুপ। (আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০৫-৫০৬, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫৮৩, আল-মোন্তাখাব: ৮৭৯) ।

সূরা আন-নাবা এর (৩১-৩৬) আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:

(مَفَازًا) ‘সফলতা’, শব্দটি ‘ক্রিয়ামূল’ অথবা ‘স্থান বাচক শব্দ’ হতে পারে। অত্র আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় ইমাম ফখরুদ্দীন আল-রাযী (র.) কয়েকটি মত বর্ণনা করেছেন:
(ক) এর দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি বা জান্নাত লাভকে বুঝানো হয়েছে।
(খ) আরেকদল তাফসীরকারক বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়া। ইমাম রাযী (র.) প্রথম মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (আল-তাফসীর আল-কাবীর: ৩১/২১) । তবে এখানে দুইটি মতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। এ ধরণের মতবিরোধকে ‘ইখতেলাফ তানাওয়ী’ বলে।

(دِهَاقًا) ‘পরিপূর্ণ’, তাফসীরকারকগণ শব্দটির কয়েকটি অর্থ করেছেন:
(ক) ইবনু আব্বাস (রা.) শব্দটিকে বিভিন্ন সময়ে ‘পরিপূর্ণ’ অর্থে ব্যবহার করেছেন।
(খ) আবু হুরায়রা (রা.) বলেন: শব্দটির অর্থ হলো ‘অনবরত’ বা ‘বিরামহীন’।
(গ) দাহ্হাক (র.) বলেন: এর অর্থ হলো: ‘স্বচ্ছ’। (আল-তাফসীর আল-কাবীর: ৩১/২২) । তবে এখানে তিনটি মতকেই একই সাথে উদ্দেশ্য করা যায়, কারণ কোরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে বুঝা যায়, জান্নাতের পানীয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হবে: তা অধিক স্বচ্ছ, পানপাত্র ভর্তি থাকবে এবং অনবরত চলবে। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।

সূরা আন-নাবা এর (৩১-৩৬) আয়াতের সাথে পূর্ববর্তী আয়াতের সম্পর্ক:

পূর্ববর্তী আয়াতাবলী তথা (১৭-৩০) নাম্বার আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে যে, কিয়ামত কখন সংগঠিত হবে তা পূর্ব নির্ধারিত, যা সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। অনুরুপভাবে কিয়ামতের অবস্থা এবং জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আর অত্র আয়াতসমূহ তথা (৩১-৩৬) নাম্বার আয়াতে কিয়ামতের দিন মোত্তাকীদের পুরস্কারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং পূর্বের আয়াতের সাথে অত্র আয়াতাবলীর সম্পর্ক সুস্পষ্ট। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/২২) ।

সূরা আন-নাবা এর (৩১-৩৬) আয়াতের শিক্ষা:

১। অত্র সূরার (৩১-৩৫) নাম্বার আয়াতে যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করে তাদের জন্য পাঁচটি পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে:
(ক) তারা জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে স্থায়ী জান্নাত লাভের মাধ্যমে মহাসফলতা লাভ করবেন।
(খ) সেখানে তাদের আরামআয়েসের জন্য ফুলে-ফলে সুশোভিত উদ্যানসমূহ রয়েছে এবং খাবার হিসেবে রয়েছে সুঘ্রানযুক্ত আঙ্গুরসমূহ।
(গ) উপভোগের জন্য রয়েছে সমবয়স্কা উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী।
(ঘ) পানীয় হিসেবে রয়েছে পরিপূর্ণ স্বচ্ছ পানপাত্র, যা অনবরত থাকবে।
(ঙ) সেখানে তারা কোন অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/২৪) ।
২। ছত্রিশ নাম্বার আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কারো পক্ষে শুধু তার নেকআমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব নয়, বরং জান্নাতে প্রবেশ করতে হলে নেকআমলের পাশাপাশি আল্লাহর রহমত প্রত্যাশী হতে হবে। এক কথায় বলা যায় জান্নাতে প্রবেশের জন্য দুইটি জিনিস প্রয়োজন হবে: (ক) নেকআমল এবং (খ) আল্লাহর দয়া। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।

আয়াতাবলীর আমল:

(ক) পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান এনে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(খ) আল্লাহ তায়ালার মহা পুরস্কারের আশায় বেশী বেশী নেকআমল করা এবং তাঁর রহমত পাওয়ার জন্য দোয়া করা।

সূরা আন-নাবা এর (১৭-৩০) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: কিয়ামতের অবস্থা এবং সেখানকার শাস্তির ধরণ।

By দৈনিক তাফসীর No Comments

إِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ كَانَ مِيقَاتًا (17) يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَتَأْتُونَ أَفْوَاجًا (18) وَفُتِحَتِ السَّمَاءُ فَكَانَتْ أَبْوَابًا (19) وَسُيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا (20) إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا (21) لِلطَّاغِينَ مَآبًا (22) لَابِثِينَ فِيهَا أَحْقَابًا (23) لَا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا (24) إِلَّا حَمِيمًا وَغَسَّاقًا (25) جَزَاءً وِفَاقًا (26) إِنَّهُمْ كَانُوا لَا يَرْجُونَ حِسَابًا (27) وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا كِذَّابًا (28) وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ كِتَابًا (29) فَذُوقُوا فَلَنْ نَزِيدَكُمْ إِلَّا عَذَابًا (30) [سورة النبأ: 17-30]

আয়াতের আলোচ্য বিষয়: কিয়ামতের অবস্থা এবং সেখানকার শাস্তির ধরণ।

আয়াতের সরল অনুবাদ:

(১৭) নিশ্চয় ফয়সালার দিন নির্ধারিত আছে।

(১৮) সেদিন সিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে আসবে।

(১৯) আর আকাশ খুলে দেওয়া হবে, ফলে তা বহু দ্বারবিশিষ্ট হবে।

(২০) আর পাহাড়সমূহকে চলমান করা হবে, ফলে সেগুলো মরীচিকা হয়ে যাবে।

(২১) নিশ্চয় জাহান্নাম গোপন ফাঁদ।

(২২) সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল।

(২৩) সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।

(২৪) সেখানে তারা কোন শীতলতা আস্বাদন করবে না এবং না কোন পানীয়।

(২৫) ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া।

(২৬) উপযুক্ত প্রতিফল স্বরুপ।

(২৭) নিশ্চয় তারা হিসেবের আশা করতো না।

(২৮) আর তারা আমার আয়াতসমূহকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছিল।

(২৯) আর সবকিছুই আমি লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেছি।

(৩০) সুতরাং তোমরা স্বাদ গ্রহণ করো, আমি তো কেবল তোমাদের আযাবই বৃদ্ধি করবো।

আয়াতের ভাবার্থ:

নিশ্চয় পূর্বে যারা এসেছিলো এবং পরে যারা আসবে সকলের জন্য কিয়ামতের দিন নির্ধারিত রয়েছে, যেদিন সকল প্রাণীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। সেদিন সিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন মানুষ তাদের দলনেতার সাথে দলে দলে হাশরের ময়দানে জড়ো হবে। আর আকাশ খুলে দেওয়া হবে, ফলে তা বহু দ্বারবিশিষ্ট হবে এবং সেখান থেকে ফেরেশতারা হাশরের ময়দানে অবতরণ করবে। আর পাহাড়সমূহকে চলমান করা হবে, ফলে সেগুলো মরীচিকার রুপ ধারণ করে নিশ্চিন্থ হয়ে যাবে। নিশ্চয় জাহান্নাম পাপীদের জন্য গোপন ফাঁদ এবং সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। উপযুক্ত প্রতিফল স্বরুপ সেখানে তারা ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া কোন শীতলতা এবং কোন পানীয় আস্বাদন করবে না। নিশ্চয় তারা দুনিয়ায় হিসাবের আশা করতো না। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করতো। আর আমি তাদের সকল অপকর্মকে লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেছি। সুতরাং তারা এ আযাবের স্বাদ গ্রহণ করবে, আমি তো কেবল তাদের আযাবই বৃদ্ধি করবো। (আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০৩-৫০৪, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫৮২, আল-মোন্তাখাব: ৮৭৯) ।

সূরা আন-নাবা এর (১৭-৩০) আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:

(بَرْدًا) ‘ঠান্ডা’, অধিকাংশ তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অত্র আয়াতাংশ দ্বারা দুইটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে:
(ক) জাহান্নামের আযাব শিথিল করা, সুতরাং আয়াতের অর্থ হবে: “তাদের জন্য সেখানে জাহান্নামের আযাব শিথিল করা হবে না”।
(খ) তন্দ্রা বা ঘুম, সুতরাং আয়াতের অর্থ হবে: “তারা সেখানে ঘুমানোর সুযোগ পাবে না”। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/১৯, আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০৩) ।

সূরা আন-নাবা এর (১৭-৩০) আয়াতের সাথে পূর্ববর্তী আয়াতের সম্পর্ক:

পূর্ববর্তী আয়াত তথা (১-১৬) নাম্বার আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা এ ইউনিভার্সকে পুরোপুরি ধ্বংস করে নুতন এক জগৎ সৃষ্টি করে সেখানে সকল প্রাণীকে জড়ো করে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে সক্ষম। আর অত্র আয়াতাবলী তথা (১৭-৩০) নাম্বার আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে যে, কিয়ামত কখন সংগঠিত হবে তা পূর্ব নির্ধারিত, যা সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। অনুরুপভাবে কিয়ামতের অবস্থা ও জাহান্নামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং পূর্বের আয়াতের সাথে অত্র আয়াতাবলীর সম্পর্ক সুস্পষ্ট। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/১৬) ।

সূরা আন-নাবা এর (১৭-৩০) আয়াতের শিক্ষা:

১। অত্র সূরার সতের নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলের জন্য নির্ধারিত, যার জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে রয়েছে। অতঃপর (১৮-২০) নাম্বার আয়াতে কিয়ামতের তিনটি ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।
(ক) ইসরাফীল (আ.) এর সিঙ্গায় দ্বিতীয় ফ‚ঁকের পরে সকল প্রাণী কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে জড়ো হবে। আর মানুষ তাদের নেতার সাথে দলে দলে ময়দানে মাহশারে একত্র হবে। এ সম্পর্কে কোরআন মাজীদের সূরা ইসরা এর একাত্তর নাম্বার আয়াতে এসেছে:
(يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ فَمَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَأُولَئِكَ يَقْرَءُونَ كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا) [الإسراء: ৭১] .
অর্থাৎ: “যেদিন আমি প্রত্যেক জাতিকে তাদের নেতাদের সাথে ডাকবো, সেদিন যাদের আমলনামা ডানহাতে দেওয়া হবে, তারা পড়া শুরু করবে, তাদের উপর সেদিন বিন্দুমাত্র যুলম করা হবে না” (সূরা ইসরা: ৭১) ।
(খ) সেদিন আকাশ ফেটে বহু দরজা বিশিষ্ট হবে এবং ফেরেশতাগণ আকাশ থেকে অবতরণ করবে। এর মাধ্যমে বিশ্ব রুপরেখা এবং রীতিনীতি সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর আল্লাহ তায়ালা অস্থায়ী রাজাবাদশাহদের কাছ থেকে সকল ক্ষমতা গ্রহণ করে তিনি একক ক্ষমতার অধিকারী হবেন। এ সম্পর্কে সূরা ইনফিতার এবং সূরা ইনশিক্বাক এর প্রথম আয়াতাবলীতে বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও সূরা ফুরকান এর পচিশ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে:
(وَيَوْمَ تَشَقَّقُ السَّمَاءُ بِالْغَمَامِ وَنُزِّلَ الْمَلَائِكَةُ تَنْزِيلًا (২৫) الْمُلْكُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ لِلرَّحْمَنِ وَكَانَ يَوْمًا عَلَى الْكَافِرِينَ عَسِيرًا (২৬)) [سورة الفرقان: ২৫-২৬].
অর্থাৎ: “এবং যেদিন আকাশ তার মেঘমালা নিয়ে ফেটে পড়বে, আর দলে দলে ফেরেশতারা যমীনে নেমে আসবে। সেদিন চুড়ান্ত বাদশাহী হবে একমাত্র দয়াময় আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যারা তাকে অস্বীকার করেছে তাদের উপর সেদিনটি হবে খুবই কঠিন” (সূরা ফুরকান: ২৫) ।
(গ) পাহাড়গুলোকে তাদের জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলে সমতল করা হবে, ফলে তা মরীচিকার মতো হয়ে যাবে (আন-নাবা: ২০), তা সম্পূর্ণরূপে চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ হয়ে ধুলাবালিতে রুপান্তরিত হবে (ওয়াক্বিয়া: ৫-৬) এবং তা এক পর্যায়ে বাতাশে ধুনা তুলার মতো উড়তে থাকবে (আল-ক্বারিয়াহ: ৫/ ত্বহা: ১০৫/ আন-নমল: ৮৮) ।
২। অত্র সূরার (২১-২৬) আয়াতে কিয়ামতের দিন হতভাগা কাফের-মোশরেকদের ও সীমালঙ্ঘনকারীদের পাঁচটি ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে:
(ক) জাহান্নাম তাদের জন্য গোপন ফাঁদ হবে।
(খ) জাহান্নাম হবে তাদের একমাত্র আবাসস্থল।
(গ) তারা সেখানে যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।
(ঘ) তাদের জন্য সেখানে ঘুমানোর কোন সুযোগ থাকবে না, অথবা তাদের জন্য শাস্তিকে বিন্দুমাত্র শিথিল করা হবে না।
(ঙ) জাহান্নামে তাদের পানীয় হবে ফুটন্ত পানি ও পুজ।
৩। অত্র সূরার (২৭-২৮) নাম্বার আয়াতে কাফিররা উল্লেখিত শাস্তির উপযোগী হওয়ার দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:
(ক) দুনিয়ায় থাকা কালে তারা মনে করতো কিয়ামতের দিন কোন হিসাবনিকাশ হবে না।
(খ) তারা আল্লাহর আয়াতবলীকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করতো।
৪। উনত্রিশ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: আল্লাহ তায়ালা সকলের কৃতকর্ম কিতাবে লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন, যার আলোকে কিয়ামতের দিন বিচার হবে।
৫। ত্রিশ নাম্বার আয়াতে কাফিররা জাহান্নামে প্রবেশের পর তাদেরকে লাঞ্চিত করার জন্য একটি ঘোষণা দেওয়া হবে: তোমরা দুনিয়াতে আল্লাহর অবাধ্য ছিলে, এখন জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করো, আজ তোমাদের জন্য শাস্তি কেবল বাড়ানো হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বলেন: জাহান্নামীদের জন্য অত্র আয়াতের চেয়ে অধিক কষ্টের আয়াত আর দ্বিতীয়টি নেই। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/১৯) ।

আয়াতাবলীর শিক্ষা:

(ক) পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান এনে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(খ) আল্লাহর আয়াতাবলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।

বাজার/ সপিং মলে প্রবেশের দোয়া:

By আজকের দোয়া No Comments

বাজার বা সপিং মলে প্রবেশের সময় নিম্নের দোয়া পড়তে হয়:

.لَا إِلَه إِلَّا الله وَحده لَا شريك لَهُ، لَهُ الْملك وَله الْحَمد، يحي وَيُمِيت بِيَدِهِ الْخَيْر، وَهُوَ على كل شَيْء قدير

অর্থাৎ: “আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর জন্য সকল প্রশংসা, তিনি জীবন এবং মৃত্যু দান করেন, তাঁরই হাতে সকল কল্যান। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান”।

ওমার ইবনু খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:  যে ব্যাক্তি উল্লেখিত দোয়াটি সপিং মলে ঢুকার সময় পাঠ করে, তার আমলনামায় এক লক্ষ নেকী লেখা হয়। (ইবনু মাজাহ: ২২৩৫) ।

শায়খ আলবানী (র.) হাদীসটি কে হাসান বলেছেন।

সূরা আন-নাবা এর (১-১৬) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: পুনরুত্থান দিবস এবং তা সংগঠিত হওয়ার প্রমাণ।

By দৈনিক তাফসীর No Comments

عَمَّ يَتَسَاءَلُونَ (1) عَنِ النَّبَإِ الْعَظِيمِ (2) الَّذِي هُمْ فِيهِ مُخْتَلِفُونَ (3) كَلَّا سَيَعْلَمُونَ (4) ثُمَّ كَلَّا سَيَعْلَمُونَ (5) أَلَمْ نَجْعَلِ الْأَرْضَ مِهَادًا (6) وَالْجِبَالَ أَوْتَادًا (7) وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا (8) وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا (9) وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا (10) وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا (11) وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا (12) وَجَعَلْنَا سِرَاجًا وَهَّاجًا (13) وَأَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَاءً ثَجَّاجًا (14) لِنُخْرِجَ بِهِ حَبًّا وَنَبَاتًا (15) وَجَنَّاتٍ أَلْفَافًا (16) [سورة النبأ: 1-16]

 

আয়াতের আলোচ্য বিষয়: পুনরুত্থান দিবস এবং তা সংগঠিত হওয়ার প্রমাণ।

আয়াতের সরল অনুবাদ:
(১) কোন বিষয় সম্পর্কে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে?
(২,৩) মহাসংবাদটি সম্পর্কে, যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে।
(৪) কখনও নয়, তারা অচিরেই জানতে পারবে।
(৫) আবারও বলি, কখনও নয়, তারা অচিরেই জানতে পারবে।
(৬,৭) আমি কি যমীনকে শয্যা এবং পর্বতসমূহকে পেরেক বানাইনি?
(৮) আর আমি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।
(৯) আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে বিশ্রাম বানিয়েছি।
(১০) আর রাত্রকে বানিয়েছি আবরণ।
(১১) আর দিনকে বানিয়েছি জীবিকার্জনের সময়।
(১২) আর আমি তোমাদের উপর বানিয়েছি সাতটি সুদৃঢ় আকাশ।
(১৩) আর আমি সৃষ্টি করেছি উজ্জ্বল একটি প্রদীপ।
(১৪,১৫) আর আমি মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি, যাতে আমি তা দিয়ে শস্য ও উদ্ভিদ উৎপাদন করতে পারি।
(১৬) আরো উৎপন্ন করতে পারি ঘন উদ্যানসমূহ।
(আল-কোরআনুল কারীম সরল অনুবাদ: ১২২৬-১২২৭, আহাসানুল বায়ান: ১০৫০-১০৫১, কোরআন মাজীদ সহজ-সরল অনুবাদ: ৯৬৫-৯৬৬) ।

আয়াতের ভাবার্থ:
কোন বিষয় সম্পর্কে কোরাইশ গোত্রের কাফের-মোশরেকরা পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? অবশ্যই তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক নিয়ে আসা কোরআনকে সম্পর্কে মতভেদ করছে, কারণ এ কোরআন পুনরুত্থান দিবস সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন: এ ধরণের মতভেদ করা কখনও ঠিক নয়, তারা অচিরেই পুনরুত্থান দিবসকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। আল্লাহ তায়ালা আবারও তাকীদ দিয়ে বলেছেন, এ ধরণের আচরণ কখনও ঠিক নয়, তারা অচিরেই এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর কুদরাত বর্ণনার মাধ্যমে পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত হওয়ার যৌক্তিক দলীল পেশ পূর্বক বলেন: তোমরা কি দেখছোনা আমি যমীনকে সমতল আকারে তৈরি করে তোমাদের জন্য শয্যা হিসেবে নির্ধারণ করেছি এবং পর্বতসমূহকে যমীনের সাথে পেরেক মেরে দিয়েছি যাতে তা স্থির থাকে। আর আমি প্রজননের জন্য তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আর আমি নিদ্রাকে তোমাদের জন্য বিশ্রাম বানিয়েছি। আর রাত্রকে বানিয়েছি আবরণ, যাতে আরামে বিশ্রাম নিতে পারো। আর দিনকে বানিয়েছি জীবিকার্জনের সময়, যাতে তোমরা জীবিকার্জন করে আরাম আয়েশে জীবনযাপন করতে পারো। এছাড়াও আমি তোমাদের উপর সাতটি সুদৃঢ় আকাশকে যমীনের জন্য ছাদ করেছি, যা তারকারাশি দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। তোমাদেরকে বাচিয়ে রাখার জন্য সূর্য নামক একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করেছি। অনুরুপভাবে আমি মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি, যাতে আমি তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্য শস্য, উদ্ভিদ এবং ঘন উদ্যানসমূহ উৎপাদন করতে পারি। উল্লেখিত ক্ষমতা দেখেও তোমরা বিশ্বাস করছো না যে, যিনি এত কিছু করতে পেরেছেন, তিনি অবশ্যই পুনরুত্থান দিবসে মানবজাতিকে পুনর্জীবিত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে পারবেন। (আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০১-৫০২, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫৮২, আল-মোন্তাখাব: ৮৭৭-৮৭৮) ।

আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
(النَّبَإِ الْعَظِيمِ) ‘মহাসংবাদ’, অত্র আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? এ বিষয়ে তাফসীরকারকদের থেকে দুইটি মত পাওয়া যায়: (ক) আল-কোরআন আল-কারীম এবং (খ) কিয়ামতের দিন। (গরীব আল-কোরআন, ইবনু কুতাইবা: ৪৩৪) ।
তবে ইমাম ইবনু কাছীর (র.) দ্বিতীয় মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, কারণ তৃতীয় নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করে। (তাফসীর ইবনু কাছীর: ৮/৩০২) ।
(سِرَاجًا وَهَّاجًا) ‘একটি উজ্জ্বল প্রদীপ’, অত্র আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: সূর্য। (গরীব আল-কোরআন, ইবনু কুতাইবা: ৪৩৪) ।
(سَبْعًا) ‘সাতটি’, অত্র আয়াতাংশে সাত সংখ্যা দ্বারা সাত আকাশকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/১১) ।

অত্র সূরার সাথে পূর্ববর্তী সূরার সম্পর্ক:
পূর্ববর্তী সূরা তথা সূরা মুরসালাত এ পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত করা আল্লাহ তায়ালার জন্য খুবই সহজ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর অত্র সূরা তথা সূরা আন-নাবা তেও একই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। (তাফসীর মাওজূয়ী, মোস্তফা মুসলিম: ১০/৩) ।

সূরা আন-নাবা এর (১-২) আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
ইবনু জারীর আততবারী (র.) হাসান (র.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হলে মক্কার কাফের-মোশরেকরা নিজেদের মধ্যে কানাকানি শুরু করে দেয়। তখন আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার প্রথম দুইটি আয়াত অবতীর্ণ করেন। (লুবাব আল-নুক‚ল, সুয়ূতী: ৩৫১) ।

সূরা আন-নাবা এর (১-১৬) আয়াতের শিক্ষা:
১। অত্র সূরার (১-৩) নাম্বার আয়াতে কোরআন এবং পুনরুত্থান দিবসকে মহান বিষয় আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অনুরুপভাবে পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত হবে মর্মে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
২। অত্র সূরার (৪-৫) আয়াতে বলা হয়েছে যে, যারা কোরআন ও পুনরুত্থান দিবসকে অস্বীকার করে, তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) যে বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন তার সত্যতা অচিরেই জানতে পারবে।
৩। অত্র সূরার (৬-১৬) নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নয়টি বিষয়ে তাঁর অপরিসীম ক্ষমতা বর্ণনার মাধ্যমে পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত করতে তিনি যে সক্ষম তার স্বপক্ষে যৌক্তিক দলীল পেশ করেছেন:
(ক) যমীনকে সমতল আকারে বিছানা স্বরুপ তৈরি করা।
(খ) পর্বতসমূহকে যমীনের সাথে পেরেক মেরে পৃথিবীকে স্থির রাখা।
(গ) প্রজননের জন্য মানবজাতিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা।
(ঘ) নিদ্রাকে প্রাণীকুলের জন্য বিশ্রাম হিসেবে নির্ধারণ করা।
(ঙ) বিশ্রামকে আরামদায়ক বনানোর জন্য রাত্রকে আবরণ বানানো।
(চ) দিনকে জীবিকার্জনের সময় হিসেবে নির্ধারণ করা।
(ছ) সাতটি সুদৃঢ় আকাশকে যমীনের জন্য ছাদ বানিয়ে তা তারকারাশি দিয়ে সজ্জিত করা।
(জ) সৃষ্টিকুলকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সূর্য নামক একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করা।
(ঝ) সৃষ্টিকুলের জীবিকার জন্য শস্য, উদ্ভিদ এবং ঘন উদ্যানসমূহ উৎপাদন করার লক্ষ্যে মেঘমালা থেকে পরিমিত পানি বর্ষণ করা।

আয়াতাবলীর শিক্ষা:
(ক) তাহাজ্জুদ সালাতে সূরা আন-নাবা তেলাওয়াত করা।
(খ) পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান এনে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(গ) কোন বিষয়ে নিজেদের ভিতর অতি কানাকানি না করে বিশেষজ্ঞদের স্মরনাপন্ন হওয়া।

error: Content is protected !!