﴿لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ (92)﴾ [سورة آل عمران: 86-91]
আয়াতের আলোচ্যবিষয়: পূণ্যময় দানের ধরণ এবং তার প্রতিফল
আয়াতের সরল অনুবাদ:
৯২। তোমরা কখনও সওয়াব অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তু ব্যয় করবে। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয় সম্যক জ্ঞাত।
আয়াতের ভাবার্থ:
আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুমিন বান্দাদের, যারা তাঁর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা কখনই জান্নাত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে না যতক্ষণ না তারা তাদের প্রিয় ও উৎকৃষ্ট সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে।
অতঃপর তিনি তাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, তারা যতটুকু খরচ করে, তা অল্প হোক বা বেশী, মূল্যবান হোক বা সাধারণ, তিনি সবকিছুরই জ্ঞান রাখেন এবং সে অনুযায়ী প্রতিফল দিবেন। এর মাধ্যমে তিনি তাদের মধ্যে দান করার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করেন এবং উৎসাহ দেন।
এ আয়াত অবতীর্ণ হলে, আবু তালহা (রা.) এসে বললেন: হে আল্লাহর নবী! আমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হলো- ‘বাইরুহা’ নামের একটি বাগান। আমি এটিকে আল্লাহর পথে দান করতে চাই। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: এটি লাভজনক সম্পদ, তুমি এটি তোমার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করো। অতঃপর তিনি সেটি আত্মীয়দের (হাসান বিন সাবিত ও উবাই ইবনু কা’ব) মাঝে বিতরণ করে দিলেন। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৩/২৯৪, আইসার আল-তাফাসীর: ১/৩৪৫-৩৪৬, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৬২, আল-মোন্তাখাব: ১/১০০) ।
আয়াতের বিরল শব্দের ব্যাখ্যা:
﴿الْبِرَّ﴾ ‘পুণ্য বা সওয়াব’, এখানে আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- জান্নাত। অর্থাৎ: তোমাদের প্রিয় বস্তু ব্যয় না করা পর্যন্ত জান্নাত লাভ করতে পারবে না। (আইসার আল-তাফাসীর, জাযায়েরী: ১/৩২৫) ।
﴿تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ﴾ ‘তা থেকে ব্যয় করো, যা তোমরা ভালোবাসো’, আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- মানের দিক থেকে উৎকৃষ্ট এবং তোমাদের কাছে প্রিয়, তা আল্লাহর পথে ব্যয় করো। (তাফসীর গরীব আল-কোরআন, কাওয়ারী: ৩/৯২) ।
﴿حَتَّى تُنْفِقُوا﴾ ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না ব্যয় করবে’, আয়াতাংশে ব্যয় করা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে? এ সম্পর্কে তাফসীরকারকদের থেকে কয়েকটি মত পাওয়া যায়:
(ক) হাসান বসরী (র.) এর মতে, এখানে ‘যাকাত’কে বুঝানো হয়েছে।
(খ) ইমাম যমাখশারী (র.) বলেন: এই আয়াতে আল্লাহর রাস্তায় দানের ক্ষেত্রে শুধু যাকাত নয়, বরং সমস্ত প্রকার সদকা ও স্বেচ্ছা দানকেও অন্তরর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে শর্ত রাখা হয়েছে যে, দান অবশ্যই এমন সম্পদ থেকে হতে হবে যা দানকারীর কাছে প্রিয়, মূল্যবান এবং মন থেকে দিতে কষ্ট হয়। কারণ, সত্যিকারের ত্যাগ ও খোদাভীতি তখনই প্রকাশ পায় যখন মানুষ নিজের প্রিয় বস্তু হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করে। অর্থাৎ, এই আয়াতের মূল শিক্ষা হলো দান এমন হওয়া উচিত যা অন্তর থেকে আসে এবং যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, লোক দেখানো বা অবহেলিত সম্পদ থেকে নয়। (তাফসীর আল-কাশশাফ: ১/৩৮৪) ।
দ্বিতীয় মতটি গ্রহণ করা হলে, দুইটি মতের উপরই আমল হয়ে যায়। সুতরাং আয়াতে ব্যয় দ্বারা যাকাত ও সাধারণ দান-সদাকা এবং হাদিয়া-তোহফা সবকিছুকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ: মানুষের সকল প্রকার দানই উৎকৃষ্ট সম্পদ থেকে হওয়া উচিৎ। (আল্লাহই ভালো জানেন)।
উল্লেখিত আয়াতের সাথে অন্যান্য আয়াতের সম্পর্ক:
অত্র সূরার বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইহুদী-খৃষ্টানদের বিভিন্ন দাবি, যেমন: তাদের নিজেদেরকে একমাত্র ঈমানদার ধারনা করা, নবুওয়াত শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা, তারা আল্লাহর একমাত্র মনোনিত জাতি, তারা জাহান্নামে অল্প কিছু দিন ছাড়া অবস্থান করবে না ইত্যাদির কথা তুলে ধরেছেন। অত্র আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সত্যিকার ঈমানের মানদন্ড জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: ঈমানের সত্যিকার মাপকাঠি হলো: “আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় জিনিসগুলো দান করা” তা যেন হয় নিঃস্বার্থভাবে ও উত্তম অভিপ্রায়ে। অথচ, হে দাবীদারগণ! তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিবর্তে অর্থ-সম্পদের প্রতি লালসা পোষণ করো। যদি তোমাদের কেউ কিছু দান করে, তাহলে তা এমন জিনিস হয়, যা তোমার কাছে তুচ্ছ, যা তুমি অপছন্দ করো। কারণ, তোমাদের অন্তরে অর্থের প্রতি ভালোবাসা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার চেয়ে বেশি, আর সম্পদ জমা করে রাখার আকাংক্ষা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও প্রতিদানের চেয়ে বড় হয়ে গেছে। তাহলে কীভাবে তোমরা আশা করো যে তোমরা হবে সত্যিকার মুমিন, যখন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় প্রিয় জিনিসগুলোই দান করতে পারো না? (তাফসীর আল-মারাগী: ৩/২১১) ।
আয়াত সংশ্লিষ্ট কিছু ঘটনা:
প্রথম ঘটনা:
সহীহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে: উল্লেখিত আয়াতটি অবতীর্ণ হলে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেছিলেন: “হে আল্লাহর রাসূল! খাইবারে আমার যে জমির অংশ রয়েছে, তার চেয়ে আমার কাছে কোনো সম্পদ বেশি প্রিয় নয়। আপনি বলুন, আমি তা কীভাবে ব্যয় করব?” রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: “মূল সম্পদটিকে স্থায়ী করে দাও অর্থাৎ বিক্রি করো না, আর এর থেকে উৎপন্ন ফসল বা লাভ জনসাধারণের কল্যাণে সদকা করো”। (তাফসীর ইবনু কাসীর: ২/৭৩) ।
দ্বিতীয় ঘটনা:
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন: আবু তালহা (রাঃ) ছিলেন মদিনার আনসারদের মধ্যে সবচেয়ে ধনবান ব্যক্তি। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ ছিল ‘বাইরুহা’ নামক একটি বাগান। এই বাগানটি ছিল মসজিদে নববীর সামনের দিকে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই সেখানে যেতেন ও তার বিশুদ্ধ পানি থেকে পান করতেন।
আনাস (রাঃ) বলেন: যখন কুরআনের উল্লেখিত আয়াত অবতীর্ণ হলো, তখন আবু তালহা (রাঃ) বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা কখনো পূণ্যতা অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় জিনিস থেকে দান করো।’ আর আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হচ্ছে বাইরুহা বাগানটি। তাই আমি এটিকে আল্লাহর পথে সদকা করলাম। আমি চাই এর বিনিময়ে পূণ্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে। হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী এটি যেখানে উপযুক্ত মনে করেন, সেখানে ব্যয় করুন”।
রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তরে বললেন: “অসাধারণ! এটা লাভজনক সম্পদ, এটা লাভজনক সম্পদ! আমি তা শুনেছি। আর আমি মনে করি, তুমি এটা তোমার আত্মীয়দের মাঝে বিতরণ করো।”
আবু তলহা (রাঃ) বললেন: “ঠিক আছে, হে আল্লাহর রাসূল!”
এরপর তিনি তা তাঁর আত্মীয়স্বজন ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। এই হাদিসটি সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম উভয় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। (তাফসীর ইবনু কাসীর: ২/৭৩) ।
তৃতীয় ঘটনা:
ইবনু আবি হাতিম মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন: যখন কুরআনের উল্লেখিত আয়াত নাযিল হলো, তখন যাইদ ইবন হারিসা (রাঃ) একটি ঘোড়া নিয়ে এলেন, যার নাম ছিল “সাবাল”, এবং সেই ঘোড়াটিই ছিল তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ। তিনি এসে বললেন: “এটি আল্লাহর রাস্তায় সদকা স্বরূপ”।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তা গ্রহণ করলেন এবং সেটিতে নিজের ছেলে উসামা (রাঃ)- কে আরোহন করালেন। তখন যাইদ (রাঃ)-এর মনে কিছুটা কষ্ট বা দুঃখ অনুভূত হলো, যেহেতু প্রিয় জিনিসটি নিজ ছেলের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তা লক্ষ্য করলেন এবং বললেন: “জেনে রেখো, আল্লাহ নিশ্চয়ই এই দান কবুল করে নিয়েছেন”। (তাফসীর আল-মারাগী: ৩/২১২) ।
চতুর্থ ঘটনা:
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমার (রা.) বলেন: উল্লেখিত আয়াত অবতীর্ণ হলে আমি চিন্তা করলাম আল্লাহ তাআলা আমাকে যা দিয়েছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কী? আমি দেখলাম, আমার সবচেয়ে প্রিয় হলো মারজানাহ নামের এক রোমান দাসী। তখন আমি তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে স্বাধীন করে দিলাম। এরপর আমি ভাবলাম, যদি আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোনো কিছু উৎসর্গ করার পর তা ফিরিয়ে নিতে চাইতাম, তাহলে আমি তাকে বিয়ে করে ফেলতাম। কিন্তু আমি তা করিনি; বরং আমি তাকে নাফি’ এর সাথে বিবাহ দিয়েছি, যাকে আমি আমার নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতাম। (তাফসীর আল-মারাগী: ৩/২১২) ।
আয়াতের শিক্ষা:
১। উল্লেখিত আয়াতে দুইটি বিষয় কথা বলা হয়েছে:
(ক) বান্দার প্রিয় বস্তু ছাড়া কোন দানকে আল্লাহ কবুল করেন না, এটি আল্লাহ প্রদত্ব একটি ফর্মূলা, আল্লাহ তায়ালা কারো দান কবুল করেছেন, এ মর্মে নিশ্চয়তা পেতে হলে বান্দাকে অবশ্যই তার কাছে প্রিয় বস্তুটিকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে। এ জন্য সালাফদের কাছে যখন কোন জিনিস প্রিয় মনে হতো, তখন তা আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দিতেন। এ বিষয়ে চার জন সাহাবীর দৃষ্টান্ত ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের সমাজের বেশীর ভাগ মানুষ আল্লাহ প্রদত্ব এ নিয়মকে উল্টিয়ে ফেলেছে। স্বাভাবিকভাবে দেখা যায়, যে জিনিসটি তার কাছে অতিরিক্ত বা মূল্যহীন তা আল্লাহর পথে দান করে দেয়। যেমন: কেউ আল্লাহর পথে কোন কিছু দান করতে চাইলে সে অনুসন্ধান করে কোন জিনিষটি তার প্রয়োজন নেই, সেই জিনিষটি আল্লাহর পথে ব্যয় করে। অনুরুপভাবে কারো একাধিক সন্তান থাকলে তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম মেধাবী এবং অকেজো সন্তানটিকে দীনী শিক্ষার জন্য মানত করে। এ জাতীয় মানুষের সংশোধনের জন্য অত্র আয়াতে শিক্ষা রয়েছে। (আল্লাহই ভালো জানেন)
(খ) বান্দা যা ব্যয় করে, তা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সম্যক জ্ঞাত, অর্থাৎ: সে কি তার প্রিয় বস্তু আল্লাহর পথে দান করছে নাকি তার অপ্রয়োজনীয় জিনিষটি দায়সারাভাবে দান করেছে, সে বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান রাখেন। যদি সে তার প্রিয় বস্তু দান করে থাকে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। অন্যথায় আল্লাহ তায়ালা তার দানের দিকে ফিরেও তাকাবেন না। (তাফসীর আবি সাউদ: ২/৫৮) । এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা বাক্বারার ২৬৭নং আয়াতে বলেছেন:
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ وَلَسْتُمْ بِآخِذِيهِ إِلَّا أَنْ تُغْمِضُوا فِيهِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ﴾ [سورة البقرة: ২৬৭].
অর্থাৎ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা অর্জন করেছো এবং আমি যমীন থেকে যা তোমাদেরকে দান করেছি তার থেকে উৎকৃষ্ট অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করো। নিকৃষ্টতম জিনিসগুলো বেছে রেখে তার থেকে ব্যয় করো না, যা অন্যরা তোমাদেরকে দিলে তোমরা গ্রহণ করতে না। তবে অনিচ্ছকৃতভাবে হলে আলাদা কথা। আর জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দানের প্রতি মুখোপেক্ষী নন, সকল প্রশংসার মালিক তো তিনিই” (সূরাতু আল-বাক্বারা: ২৬৭) ।
২। উল্লেখিত আয়াতে সকল সম্পদ আল্লাহর পথে দান করতে বলা হয়নি, কারণ আয়াতের দুইটি অংশেই ‘মিন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা আংশিক সম্পদের উপর দালালত করে। এ বিষয়ে সূরাতু আল-ফুরকানে জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে একটি আয়াতে বলা হয়েছে, তারা দানের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে:
﴿وَالَّذِينَ إِذا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكانَ بَيْنَ ذلِكَ قَواماً﴾ [سورة الفرقان: ৬৭].
অর্থাৎ: “এবং যারা ব্যয় করার ক্ষেত্রে অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না, বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে” (সূরাতু আল-ফোরকান: ৬৭) ।
৩। এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে, “তোমাদের কাছে যা প্রিয়” আয়াতাংশ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ‘তাফসীর আবি সাউদ’ এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, শব্দটি ব্যাপকার্থে এসেছে, শুধু টাকাকড়ির ভিতরে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি, বরং সদাকার যত রুপ হতে পারে, সকল রুপকে বুঝানো হয়েছে (তাফসীর আবি সাউদ: ২/৫৭) । যেমন: কাউকে কোন কিছু হাদিয়া প্রদানের ক্ষেত্রে পছন্দনীয় ও মানানশীল জিনিস হাদিয়া দেওয়া, দান করার ক্ষেত্রে উত্তম জিনিস দান করা, কাউকে কোন বিষয়ে উপকার করতে চাইলে আন্তরিকভাবে নিজের মনে করে উপকার করা, কাউকে সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা, কাউকে আপ্যায়নের ক্ষেত্রে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেষণ করা ইত্যাদি। এক কথায়, একজন মুসলিম অন্যের জন্য এমন কিছু করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। এ বিষয়ে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ” (صحيح البخاري: ১৩).
অর্থাৎ: “তোমাদের কেউ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই ভালোবাসবে, যা সে নিজের জন্য ভালোবাসে” (সহীহ আল-বুখারী: ১৩) ।
আয়াতের আমল:
১। একজন প্রকৃত মুসলিম সর্বদা আল্লাহর পথে নিজের পছন্দের জিনিস ব্যয় করবে।
২। সে আল্লাহর পথে কি ধরণের জিনিস ব্যয় করছে, সবকিছু আল্লাহ তায়ালা জানেন, এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে দান করা উচিৎ।