Skip to main content

সূরাতু আলে-ইমরানের (৯৬-৯৭) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্যবিষয়: বাইতুল হারামের মর্যাদা এবং হজ ফরজ হওয়া প্রসঙ্গে।

﴿إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ (96) فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ (97)﴾ [سورة آل عمران: 96-97].

 

আয়াতদ্বয়ের আলোচ্যবিষয়: বাইতুল হারামের মর্যাদা এবং হজ ফরজ হওয়া প্রসঙ্গে।

আয়াতদ্বয়ের সরল অনুবাদ:
৯৬। নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানব জাতির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা মক্কায় অবস্থিত। তা বিশ্ববাসীর জন্য বরকতময় এবং হিদায়েত হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।
৯৭। তাতে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ রয়েছে, অন্যতম একটি নিদর্শন হলো- মাক্বামে ইব্রাহীম। যে সেখানে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদে থাকবে। ঐ সকল মানুষের উপর বাইতুল্লাহর হজ্জ করা ফরয, যাদের বাইতুল্লাহর দিকে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। আর যারা (হজকে) অস্বীকার করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।

আয়াতদ্বয়ের ভাবার্থ:
আর ইব্রাহীমকে (আ.) অনুসরণের অর্থ হলো- মক্কায় অবস্থিত তার নির্মাণকৃত প্রথম ঘর বায়তুল হারামকে কিবলা বানিয়ে সালাত আদায় করা এবং হজের জন্য বাইতুল্লাহর সংকল্প করা; কারণ এ ঘরের ছয়টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
(ক) এটি মক্কায় অবস্থিত মানব জাতির জন্য প্রথম নির্মিত ঘর।
(খ) আল্লাহ তায়ালা একে অবারিত কল্যাণ ও ফল-ফসলে পরিপূর্ণ করেছেন।
(গ) আল্লাহ মানব জাতির জন্য এটিকে হেদায়েতের কেন্দ্র ও ইবাদতের জায়গা বানিয়েছেন।
(ঘ) এ ঘরের মধ্যে আল্লাহর মহা নিদর্শন ‘মাক্বামে ইব্রাহীম’ রয়েছে, এটি এমন একটি পাথর যার উপর দাড়িয়ে ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আ.) কাবার সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন।
(ঙ) এ ঘরের মধ্যে সকলে নিরাপদে থাকবে।
(চ) এ ঘরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে এবং সেখানে গিয়ে হজ করতে যারা অস্বীকার করবে, তারা কাফের হয়ে যাবে। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৪/১৩, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৬২, আল-মোন্তাখাব: ১/১০১-১০২) ।

আয়াতদ্বয়ের বিরল শব্দের ব্যাখ্যা:
﴿بَكَّةَ﴾ ‘বাক্কা’, আয়াতাংশ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে? এ বিষয়ে তাফসীরকারকদের থেকে দুইটি মত পাওয়া যায়:
(ক) বাক্কা এবং মাক্কা একই জায়গা। আরবী ভাষায় ‘বা’ অক্ষরটিকে ‘মিম’ দ্বারা পরিবর্তন করে পড়া হয়। যেমন ‘সাম্মাদা রাসাহু’ কে ‘সাব্বাদা রাসাহু’ পড়া হয়।
(খ) ‘বাক্কা’ হলো- মসজিদুল হারাম এবং মাক্কা হলো- তার চতুর্দিকের নগরী। (গরীব আল-কোরআন, ইবনু কুতাইবা: ১/৯৬) ।
﴿لِلْعَالَمِينَ﴾ ‘জগৎসমূহের জন্য’, আয়াতাংশে ‘জগৎসমূহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘সকল মানুষ’। (আইসার আল-তাফাসীর, আল-জাযায়িরী: ১/৩৪৮) ।
﴿مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ﴾ ‘মাকামু ইব্রাহীম’, আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো একটি পাথর টুকরা, যার উপর দাড়িয়ে ইব্রাহীম এবং ইসমাঈল (আ.) কা’বার সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। এটা আল্লাহ তায়ালার একটি মহা নিদর্শন। (আইসার আল-তাফাসীর, আল-জাযায়িরী: ১/৩৪৮) । এটা হাতিমে কা’বার পাশে হাজরে আসওয়াদ এর পরে মাতাফের মধ্যে অবস্থিত।
﴿سَبِيلًا﴾ ‘পথ’, তবে এখানে আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে মক্কায় পৌঁছা এবং হজের মানাসেকগুলো যথানিয়মে আদায় করার সামর্থ্য থাকা। (আইসার আল-তাফাসীর, আল-জাযায়িরী: ১/৩৪৮) ।

উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ের সাথে পূর্বের আয়াতের সম্পর্ক:
পূর্বের আয়াত তথা ৯৫নং আয়াতে ইব্রাহীমের (আ.) ধর্ম অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন আর উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ে ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। সূতরাং পূর্বের আয়াতের সাথে উল্লেখিত আয়াতের সম্পর্ক স্পষ্ট। (আল-মোন্তাখাব: ১/১০১) ।

৯৭নং আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
ইমাম ইকরামা (রা.) বলেন: “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন তালাশ করে, তার পক্ষ থেকে তা গ্রহণযোগ্য নয়” আয়াতটি অবতীর্ণ হলে ইহুদীরা বলতে লাগলো: আমরা মুসলিম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের উপর হজ ফরয করেছেন। অতঃপর তারা বললো: হজ আমাদের উপর ফরয করা হয়নি। তাদের মিথ্যাচারের জবাবে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখিত আয়াত অবতীর্ণ করেন। (আসবাব আল-নুযূল, সুয়ূতী: ৬৬) ।

আয়াতদ্বয়ের শিক্ষা:
১। ৯৬নং আয়াত থেকে তিনটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়:
(ক) বায়তুল হারামের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে:
(র) এটি মক্কায় অবস্থিত মানব জাতির জন্য প্রথম নির্মিত ঘর।
(রর) আল্লাহ তায়ালা একে অবারিত কল্যাণ ও ফল-ফসলে পরিপূর্ণ করেছেন।
(ররর) আল্লাহ মানব জাতির জন্য এটিকে হেদায়েতের কেন্দ্র ও ইবাদতের জায়গা বানিয়েছেন। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৪/১২)।
(খ) পৃথিবীর প্রথম নির্মিত ঘর মক্কায় অবস্থিত বায়তুল হারাম, যা ইব্রাহীম ও তার ছেলে ইসমাঈল (আ.) তৈরি করেছেন, এছাড়াও সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় পৃথিবীর দ্বিতীয় নির্মিত ঘর হলো: ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত ‘বায়তুল মাকদাস’, যা সুলাইমান (আ.) তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে সহীহ আল-বুখারীতে একটি হাদীস রয়েছে:
عنْ أَبِي ذَرٍّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-، قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ! أَيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الأَرْضِ أَوَّلُ؟ قَالَ: الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ، قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ الْمَسْجِدُ الأَقْصَى، قُلْتُ: كَمْ كَانَ بَيْنَهُمَا؟ قَالَ: أَرْبَعُونَ سَنَةً ثُمَّ أَيْنَمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلاَةُ بَعْدُ فَصَلِّهْ فَإِنَّ الْفَضْلَ فِيهِ. (صحيح البخاري: ৩৩৬৬).
অর্থাৎ: আবু যর গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদ তৈরি করা হয়েছে? তিনি বললেন: মাসজিদুল হারাম। আমি বললাম: অতঃপর কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন: মাসজিদুল আক্সা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, উভয় মাসজিদের তৈরির মাঝে কত ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন: চল্লিশ বছর। অতঃপর তোমার যেখানেই সালাতের সময় হবে, সেখানেই সালাত আদায় করে নিবে। কেননা এর মধ্যে ফযীলত নিহিত রয়েছে। (সহীহ আল-বুখারী: ৩৩৬৬) ।
(গ) অত্র আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বাইতুল হারাম সম্পর্কে ইহুদীদের একটি সন্দেহের নিরসন ঘটিয়েছেন, বায়তুল মাকদাস থেকে কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তন করা হলে, তারা নবুয়াতের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে এবং বলে: বায়তুল মাকদাস কাবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং তা কিবলা হওয়ার অধিক হকদার; কেননা এটা কাবার আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি হলো- কিয়ামতের ময়দান। ইসহাকের (আ.) বংশধর সকল নবী-রাসূল একে সম্মান করতেন এবং এর দিকে ফিরে সালাত আদায় করতেন। হে মোহাম্মদ! তুমি যদি তাদের পথে থাকতে, তাহলে তারা যেটিকে সম্মান করেছে তুমিও তাকেই সম্মান করতে, এটাকে বাদ দিয়ে কাবাকে মহিমান্বিত করে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের বিরোধীতা করতে না। আল্লাহ তায়ালা তাদের এ সন্দেহের জবাবে বলেন: নিশ্চয় কাবা হলো পৃথিবীর প্রথম নির্মিত ঘর, যা ইব্রাহীম এবং তার ছেলে ইসমাঈল (আ.) তৈরি করেছেন। (তাফসীর আল-মারাগী: ৪/৪-৫) ।
২। ৯৭নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বায়তুল হারামের আরো তিনটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন:
(ক) এ ঘরের মধ্যে আল্লাহর মহা নিদর্শন ‘মাক্বামে ইব্রাহীম’ রয়েছে, এটি এমন একটি পাথর যার উপর দাড়িয়ে ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আ.) কাবার সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন।
(খ) এ ঘরের মধ্যে সকলে নিরাপদে থাকবে।
(গ) এ ঘরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে এবং সেখানে গিয়ে হজ করতে যারা অস্বীকার করবে, তারা কাফের হয়ে যাবে। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৪/১৩, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৬২, আল-মোন্তাখাব: ১/১০১-১০২) ।
৩। ৯৬নং আয়াতের একটি অংশে বলা হয়েছে: “যে ব্যক্তি বায়তুল হারামে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদে থাকবে”। এ বিপ্লবী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে মূলত ইব্রাহীমের (আ.) দোয়ার প্রেক্ষিতে। যেমন সূরাতু আল-বাক্বারা এর ১২৬নং আয়াতে এসেছে:
﴿وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا بَلَدًا آمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُمْ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ﴾ [سورة البقرة: ১২৬].
অর্থাৎ: “আর স্মরণ করো, যখন ইব্রাহীম (আ.) বলেছিলেন: হে আমার রব এ শহরকে নিরাপত্তার শহর বানিয়ে দেন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমানদার হবে, তাদেরকে ফলমূল দিয়ে আহারের যোগান দেন” (সূরাতু আল-বাক্বারা: ১২৬) । এ আয়াতের পরিপূর্ণ প্রতিফলন আমরা সৌদিআরবে দেখতে পাই, সৌদিআরব পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ দেশে রুপান্তরিত হয়েছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফলমূল ও শাক-শবজী এসে সৌদিআরব ফলমূলের দেশে পরিণত হয়েছে।
এখন একটি প্রশ্ন হতে পারে, আল্লাহ তায়ালা বায়তুল হারামকে কাদের জন্য কি ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তাফসীরকারকগণ বলেন:
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন:
لو ظفرت فيه بقاتل الخطاب ما مسسته حتى يخرج منه.
অর্থাৎ: “আমি যদি ওমরের হত্যাকারীকে বায়তুল হারামে পেতাম, তবুও আমি তাকে স্পর্শ করতাম না যতক্ষন না সে তা থেকে বেড়িয়ে আসতো”।
আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি হালাল ভূখন্ডে কিসাস, রিদ্দা, অথবা ব্যভিচারের কারণে নিহত হওয়া ওয়াজিব হয়, সে যদি মসজিদুল হারামে আশ্রয় নেয়, তাহলে তাকে কোনো ক্ষতি করা হবে না। তবে তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হবে না, খাবার বা পানি দেওয়া হবে না এবং তার সাথে কেনাবেচাও করা হবে না যতক্ষণ না সে সেখান থেকে বাধ্য হয়ে বেরিয়ে আসে”।
আরবের সব গোত্র এই পবিত্র স্থানটির মর্যাদা ও সম্মান স্বীকার করত, কারণ এটিকে আল্লাহর প্রতি সম্পর্কিত বলে গণ্য করা হতো। এমনকি একজন খুনি যদি হারামে আশ্রয় নেয়, তবে যতক্ষণ সে সেখানে থাকে, ততক্ষণ সে নিরাপদ থাকে।
সুতরাং উল্লেখিত বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, হারাম সকল মুসলিমের জন্য নিরাপদের জায়গা যদিও সে অপরাধী হয়। তবে এখানে একটি উহ্য প্রশ্ন হতে পারে মক্কার কতটুকু জায়গার মধ্যে নিরাপত্তার এ হুকুম প্রযোজ্য হবে?
এ প্রশ্নের উত্তরে ইমাম জাস্সাস আল-রাজি (রহ.) বলেন: “হারাম ও বায়তুল্লাহর ভিতরে নিরাপত্তা সম্পর্কিত আয়াতগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, কখনও ‘বাইতুল্লাহ’ উল্লেখ করা হয়েছে, আবার কখনও ‘হারাম’ উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, ‘বায়তুল হারাম’ এবং ‘হুদুদে হারাম’ উভয়ই নিরাপত্তার হুকুমের আওতায় পড়বে। এর আলোকে বলা যায়, যদি কোন ক্বিসাসের আসামী ‘হারাম’ এর হুদুদে আশ্রয় নেয়, তবে তাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ, যেমনিভাবে ‘বায়তুল হারাম’ এ আশ্রয় নিলে নিষিদ্ধ হয়”। (তাফসীর আল-মুনীর: ৪/১৩) ।
এখানে আরেকটি উহ্য প্রশ্ন হতে পারে, কাবা যদি নিরাপদ স্থানই হবে, তাহলে মক্কা বিজয়ের সময় এবং হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সময় তার ভিতরে কিভাবে তান্ডব চালানো হলো?
এর উত্তর হলো: কাবা শরীফকে শিরক থেকে পরিশুদ্ধ করার প্রয়োজনে এবং একমাত্র আল্লাহর উপাসনার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর নির্দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এটিকে হালাল করেছিলেন, যা তার পরে আর কারো জন্য হালাল হয়নি। এরপরে তিনি ঘোষণা দিলেন:
“من دخل المسجد فهو آمن، ومن دخل داره فهو آمن، ومن دخل دار أبي سفيان فهو آمن”.
অর্থাৎ: “যে মসজিদে প্রবেশ করবে স নিরাপদ, যে নিজ গৃহে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ, আর যে আবু সুফিয়ানের গৃহে প্রবেশ করবে সেও নিরাপদ”।
আর হজ্জাজের সময় যা ঘটেছিল তা ছিল একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা, যা কেউই সমর্থন করেনি, এবং কেউই ইবনে জুবাইরের বিরুদ্ধে তার কার্যকলাপকে বৈধ মনে করেনি; বরং তা ছিল এক নিপীড়ন ও কাবার প্রতি অবমাননা। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
﴿وَمَنْ يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ﴾ [سورة الحج: ২৫].
অর্থাৎ: “আর যারা হারাম শরীফে ইচ্ছাপূর্বক আল্লাহ বিরোধী কাজ করবে, আমি তাদেরকে কঠিন আযাব আস্বাদন করাবো” (সূরাতু আল-হাজ্জ: ২৫) ।
আবার কেউ কেউ হারাম শরীফে জান-মালের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, কিন্তু এসব করেছে দুর্বৃত্ত ও ফাসিকরা, যারা কাবা বা অন্য কোন স্থানেই আল্লাহর কোনো মর্যাদা মানে না। সুতরাং বায়তুল হারাম কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে, আর তা সবার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এটাই ইসলামের বিধান।
হজ্জের মাসয়ালা-মাসায়েল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সূরাতু আল-বাক্বারা এর (১৯৬-২০৩) আয়াতসমূহে করা হয়েছে।

আয়াতদ্বয়ের আমল:
(ক) পৃথিবীর প্রথম নির্মিত ঘর ‘কাবা’ এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা।
(খ) কারো সক্ষমতা থাকলে হজ্জ পালন করা।
(গ) বায়তুল হারামের হুরমাত রক্ষা করা।

Leave a Reply

error: Content is protected !!