Skip to main content

সূরাতু আলে-ইমরানের (৮৬-৯১) আয়াতাবলীর তাফসীর, আয়াতাবলীর আলোচ্যবিষয়: তাওবার দৃষ্টিভঙ্গিতে মুরতাদের শ্রেনীবিন্যাস ও তাদের শাস্তি

﴿كَيْفَ يَهْدِي اللَّهُ قَوْمًا كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ وَشَهِدُوا أَنَّ الرَّسُولَ حَقٌّ وَجَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (86) أُولَئِكَ جَزَاؤُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ (87) خَالِدِينَ فِيهَا لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْظَرُونَ (88) إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ (89) إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَنْ تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الضَّالُّونَ (90) إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِمْ مِلْءُ الْأَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ افْتَدَى بِهِ أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ وَمَا لَهُمْ مِنْ نَاصِرِينَ (91)﴾ [سورة آل عمران: 86-91] 

 

আয়াতাবলীর আলোচ্যবিষয়: তাওবার দৃষ্টিভঙ্গিতে মুরতাদের শ্রেনীবিন্যাস ও তাদের পরিণতি

আয়াতাবলীর সরল অনুবাদ:
৮৬। যারা ঈমানের পর, এ কথা সাক্ষ্য দানের পর যে নিশ্চয় রাসূল হক্ব এবং তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আসার পর কুফরী করেছে আল্লাহ সে কাওমকে হেদায়েত দিবেন না, আর আল্লাহ যালিম কওমকে হেদায়েত দেন না।
৮৭। নিশ্চয় এরাই তারা যাদের প্রতিদান হলো: নিশ্চয় তাদের উপর আল্লাহর লা’নত, মালাইকার (লা’নত) এবং সকল মানুষের (লা’নত)।
৮৮। তারা সেখানে স্থায়ী হবে, তাদের থেকে আযাব শিথিল করা হবে না এবং না তাদেরকে অবকাশ দেওয়া হবে।
৮৯। কিন্তু এরপরে যারা তাওবা করে এবং শুধরে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৯০। নিশ্চয় যারা ঈমান আনার পর কাফের হয়েছে, অতপর কুফরীকে বাড়িয়ে দিয়েছে, তাদের তাওবা কখনও কবুল করা হবে না; আর তারাই পথভ্রষ্ট।
৯১। নিশ্চয় যারা কাফির হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মারা গিয়েছে, তাদের থেকে যমীনপূর্ণ স্বর্ণ মুক্তিপণ দেওয়া হলেও তা কবুল করা হবে না, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং নেই কোন সাহায্যকারী।

আয়াতাবলীর ভাবার্থ:
আল্লাহ তায়ালা উল্লেখিত আয়াতে, মুরতাদের তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসা না আসার ব্যাপারে তিনটি অবস্থা এবং তাদের পরিণতির বর্ণনা দিয়েছেন:
(১) যারা ইসলাম ত্যাগ করে কাফের হওয়ার পর তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসে না, এবং অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, এদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: যারা মোহাম্মদ (সা.) এর উপর ঈমান আনায়ন করেছিল, তাকে রাসূল হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছিল এবং তাদের কাছে তার নবী-রাসূল হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণও রয়েছে, অতঃপর তাকে অস্বীকার করে মুরতাদ হয়ে যায় এবং এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তাদের জন্য শাস্তি হলো:
(ক) আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন না। এটা এক ধরণের অত্যাচারী আচরণ, আর এ ধরণের যালিম সম্প্রদায়কে আল্লাহ তায়ালা হেদায়েতের তাওফীক দেন না।
(খ) তাদের উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ, ফেরেশতাদের অভিশাপ এবং সকল মানুষের অভিশাপ।
(গ) তারা এ অভিশাপের মধ্যে চিরকাল থাকবে।
(ঘ) তারা যদি আখেরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য যমীনপূর্ণ স্বর্ণ মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চায় তাও তাদের পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না।
(ঙ) তাদের জন্য জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
(চ) কিয়ামাতের দিন তাদের পক্ষে কোন সাহায্যকারী পাওয়া যাবে না।

(২) যারা ইসলাম ত্যাগ করে কাফের হওয়ার পর তাওবা করে পুনরায় ইসলামে ফিরে আসে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: কিন্তু কেউ যদি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরে তাওবা করে পুনরায় ইসলামে ফিরে আসে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়। তাদের প্রতিদান হলো: আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।

(৩) যারা ইসলাম ত্যাগ করে কাফের হওয়ার পর মৃত্যুর সময় তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসার চেষ্ট করে, এদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: নিশ্চয় যারা ইসলাম গ্রহণের পর পুনরায় কাফের হয়েছে, অতপর সারা জীবন কুফরের উপর ছিল। অবশেষে মৃত্যুর সময় তাওবা করার চেষ্টা করে। তাদের পরিণতি হলো:
(ক) তাদের তাওবা কবুল করা হবে না এবং
(খ) তারা পথভ্রষ্ট হিসেবে পরিগণিত হবে। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৩/২৯০-২৯১, আইসার আল-তাফাসীর: ১/৩৪৩, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৬১, আল-মোন্তাখাব: ১/১০০) ।

উল্লেখিত আয়াতাবলীর সাথে পূর্বের আয়াতের সম্পর্ক:
পূর্বের আয়াতাবলীতে আলোচনা করা হয়েছে যে, সকল নবী-রাসূলের একমাত্র বাচাইকৃত ধর্ম ইসলাম, যারা এ দীনকে বাদ দিয়ে অন্য কোন দীন তালাশ করবে, তা আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর উল্লেখিত আয়াতাবলীতে যারা আল্লাহ তায়ালার বাচাইকৃত ধর্ম ইসলাম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে অন্য কোন ধর্মের অনুসরণ করবে, তাদের অবস্থা ও শাস্তির বর্ণনা এসেছে। সুতরাং উল্লেখিত আয়াতাবলীর সাথে সাথে পূর্বের আয়াতের সম্পর্ক স্পষ্ট। (তাফসীর আল-মারাগী: ৩/২০৫) ।

(৮৬-৯০) নাম্বার আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
ইমাম নাসায়ী, ইবনু হিব্বান এবং হাকিম (র.) ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, একজন আনসার ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছিল, এরপর সে ধর্ম ত্যাগ করে, অতঃপর অনুতপ্ত হয়। সে তার আত্মীয়-স্বজনকে বলেছিল: তোমরা রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করো আমার জন্য কি তাওবা করার সুযোগ আছে? তখন (৮৬-৮৯) আয়াতাবলী অবতীর্ণ করা হয়। এরপর তার আত্মীয়-স্বজন রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এ বর্তাটি পাঠালো, তখন সে আবার ইসলাম গ্রহণ করলো।
মুসাদ্দাদ তার মুসনাদে এবং আব্দুর রাজ্জাক (র.) মুজাহিদ (র.) থেকে বর্ণনা করেছেন, হারিস ইবনু সুয়াইদ নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন, কিন্তু পরে মুরতাদ হয়ে পূর্বের ধর্মে ফিরে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা (৮৬-৮৯) আয়াতাবলী অবতীর্ণ করেন। তার আত্মীয়-স্বজনের এক ব্যক্তি এই আয়াত পাঠ করলেন। তখন হারিস বললেন: আল্লাহর কসম, তুমি একজন সত্যবাদী, রাসূলুল্লাহ (সা.) তোমার চেয়েও বেশী সত্যবাদী, আর আল্লাহ তো এ তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সত্যবাদী। এরপর সে ফিরে এসে একনিষ্ঠভাবে ইসলাম গ্রহণ করলো। (লুবাব আল-নুক‚ল: ৬৬) ।
হাসান আল বাসরী এবং কাতাদা (র.) বলেন: অত্র আয়াত ইহুদীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কারণ, তারা নবী মোহাম্মদের (সা.) আগমণের সুসংবাদ দিত এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে তার আগমণের মাধ্যমে বিজয় কামনা করতো। কিন্তু যখন তারা দেখলো তিনি (সা.) বাস্তবে অন্য গোত্র থেকে প্রেরিত হয়েছেন, তখন তারা জিদ, হিংসা ও বিরোধিতা করে তার সাথে কুফরি করতে শুরু করলো। তখন আল্লাহ তায়ালা “তাদের প্রতিদান হলো: তাদের উপর আল্লাহর লা’নত, ফেরেশাকুলের লা’নত এবং সকল মানুষের লা’নত” এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩/২৮৮) ।
হাসান, কাতাদাহ এবং আতা আল-খুরাসানী (র.) বলেন, ৯০নং আয়াত ইহুদীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। তারা মূসার (আ.) প্রতি ঈমান এনেছিল, অতঃপর ঈসার (আ.) আগমণ হলে তাকে অস্বীকার করে কাফের হয়ে যায়। অবশেষে মোহাম্মদের (সা.) আগমণ হলে তাকে অস্বীকার করার মাধ্যমে তাদের কুফরীকে আরা বাড়িয়ে নেয়। (আসবাব আল-নুযূল, ওয়াহেদী: ১১৮) ।
ইমাম জুহাইলী (র.) বলেন: একটি আয়াত অবতীর্ণের একাধিক প্রেক্ষাপট হওয়াতে কোন বাধা নেই। যদিও ইমাম তবারী (র.) সহ জমহুর মুফাসসিরীন উল্লেখিত আয়াত অবতীর্ণের দ্বিতীয় প্রেক্ষাপটকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩/২৮৯) ।

সূরা আলে-ইমরানের (৮৬-৯১) আয়াতাবলীর শিক্ষা:
১। মুরতাদ বলা হয় তাদেরকে, যারা বুঝে-শুনে ইসলাম গ্রহণের পর ইসলাম ছেড়ে পুনরায় কাফির হয়ে যায় (মু’জাম আল-মুস্তালিহাত, ড. মাহমুদ: ৩/২৫৯) । বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থ ও আসবাব আল-নুযূল থেকে পরিলক্ষিত হয় যে, উল্লেখিত আয়াতাবলীতে দুই প্রকার মুরতাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে:
(ক) যারা রাসূলুল্লাহর (সা.) রিসালাতের সত্যতা জেনে এবং এ বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর ইসলাম থেকে বের হয়ে পুনরায় কাফের হয়ে গিয়েছে।
(খ) যারা মূসা (আ.) ও তাওরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। অতঃপর ঈসা (আ.) ও ইনজীলকে অস্বীকার করে কাফের হয়েছে। সর্বশেষ মোহাম্মদ (সা.) ও কোরআনকে অস্বীকার করার মাধ্যমে তাদের কুফরীকে বৃদ্ধি করেছে।
২। (৮৬-৯১) নাম্বার আয়াতাবলীতে উল্লেখিত দুই প্রকার মুরতাদের তিনটি অবস্থা এবং পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আলোচনা করেছেন। ৮৬, ৮৭, ৮৮ এবং ৯১ নাম্বার আয়াতে মুরতাদের প্রথম অবস্থা এবং এর পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম অবস্থা হলো: তারা মুরতাদ হওয়ার পরে তাওবা না করে কাফির অবস্থায় মারা যায়। তাদের পাঁচটি পরিণতি হলো:
(ক) আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কখনও হেদায়েতের তাওফীক দিবেন না।
(খ) তারা চিরকাল আল্লাহ তায়ালা, ফেরেশতাকুল এবং সকল মানুষের অভিশাপে পতিত হবে।
(গ) তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য যমীনপূর্ণ স্বর্ণ মুক্তিপণ দিলেও তা গ্রহণ করা হবে না।
(ঘ) তাদের জন্য জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
(ঙ) কিয়ামাতের দিন তাদের পক্ষে কোন সাহায্যকারী পাওয়া যাবে না।
এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে মুরতাদের আরেকটি শাস্তি পাওয়া যায়। আর তা হলো: মৃত্যুদন্ড। যেমন হাদীসে এসেছে:
عن ابن عباس، عن النبي -صلى الله عليه السلام- قال: “مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ” (صحيح البخاري: ৬৯২২).
অর্থাৎ: ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার দীন পরিবর্তন করবে, তাকে হত্যা করো” (সহীহ আল-বুখারী: ৬৯২২) । আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“لا يحل دم امرئ مسلم يشهد أن لا إله إلا الله وأني رسول الله إلا بإحدى ثلاث: النفس بالنفس، والثيب الزاني، والتارك لدينه المفارق للجماعة” (صحيح البخاري: ৬৮৭৮).
অর্থাৎ: “কোন মুসলিম যদি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, তিনটি কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। জানের বদলে জান, বিবাহিত ব্যভিচারী এবং নিজের দীন ত্যাগকারী মুসলিম জামায়াত থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া ব্যক্তি” (সহীহ আল-বুখারী: ৬৯২২) ।
৩। ৮৯নং আয়াতে মুরতাদের দ্বিতীয় অবস্থা এবং পুরস্কারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থা হলো: মুরতাদ হওয়ার পরে নিয়মতান্ত্রিক তাওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নিয়ে ইসলামের পথে ফিরে আসে। তাওবা কিভাবে করবে? তাওবার নিয়ম কি? সে বিষয়ে আলোচনা ইতিপূর্বে করা হয়েছে। আর তাদের পুরস্কার হলো: আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মাফ করে দিবেন।
৪। ৯০নং আয়াতে মুরতাদের তৃতীয় অবস্থা এবং পরিণতির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় অবস্থা হলো: মুরতাদ হওয়ার পর তাওবার অপেক্ষা করতে করতে মৃত্যুর সময় চলে আসার পরে তাওবা করা। তাদের পরিণতি হলো:
(ক) তাদের তাওবা কবুল করা হবে না এবং
(খ) তারা পথভ্রষ্ট হিসেবে পরিগণিত হবে। (আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন) ।
এ সম্পর্কে সূরা নিসা এর ১৭ ও ১৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
﴿إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهالَةٍ، ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ، فَأُولئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ، وَكانَ اللَّهُ عَلِيماً حَكِيماً. وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئاتِ، حَتَّى إِذا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ، قالَ: إِنِّي تُبْتُ الْآنَ، وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ، أُولئِكَ أَعْتَدْنا لَهُمْ عَذاباً أَلِيماً﴾ [سورة النساء: ১৭-১৮].
অর্থাৎ: “নিশ্চয় তাওবা তাদের জন্য, যারা অজ্ঞাতবশত খারাপ কাজ করে; অতঃপর কালক্ষেপণ না করে তাওবা করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তায়ালা মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। আর তওবা তাদের জন্য নয়, যারা পাপ কাজ করে, অতঃপর তাদের কারো কাছে মৃত্যু আসলে বলে: আমি এখন তাওবা করছি। এবং তাওবা তাদের জন্যও নয়, যারা কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। বস্তুত আমি তাদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি” (সূরাতু আন-নিসা: ১৭-১৮) ।
৫। কেউ ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হলে দুনিয়া ও আখেরাতে তার শাস্তি কি হবে, সে বিষয়ে উল্লেখিত আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে। এখন একটি প্রশ্ন হতে পারে, কি কাজ করিলে একজন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যাবে? এ সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম চারটি বিষয় উল্লেখ করেছেন, যার কোন একটি একজন সুস্থ-স্বাভাবিক, প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানবান মুসলিম থেকে সংগঠিত হলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে এবং তাওবা করে ইসলমে ফিরে না আসলে আয়াত এবং হাদীসে বর্ণিত শাস্তি তাদের ক্ষেত্রে প্রজোয্য হবে।
(ক) বিশ্বাসগতভাবে মুরতাদ হয়ে যাওয়া, যেমন: আল্লাহর সাথে শিরক করা, আল্লাহকে অস্বীকার করা, তাঁর কোন প্রমাণিত গুণ অস্বীকার করা, আল্লাহর জন্য সন্তান স্থির করা ইত্যাদির যে কোন একটি কারো থেকে সংগঠিত হলে, সে মুরতাদ কাফির।
(খ) কাথাবার্তার মাধ্যমে মুরতাদ হয়ে যাওয়া, যেমন: আল্লাহ তায়ালাকে গালি দেওয়া এবং রাসূলুল্লাহকে (সা.) গালি দেওয়া।
(গ) কার্যকলাপের মাধ্যমে মুরতাদ হয়ে যাওয়া, যেমন: কোরআনুল কারীমকে অপবিত্র স্থানে নিক্ষেপ করা, এটা আল্লাহর বাণীর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের প্রতীক, যা বিশ্বাস না করার লক্ষণ। অনুরুপভাবে মুর্তি পুজা করা, সূর্য বা চাদের সামনে সিজদা করা।
(ঘ) পরিত্যাগ করার মাধ্যমে মুরতাদ হয়ে যাওয়া, যেমন: দীনের সব আমল পরিত্যাগ করা এবং দীন থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। (আল-মাওসূআহ আল-ফিকহিয়্যাহ: ২২/১৮০) । আমাদের দেশের কিছু কিছু রাজনীতিবিদ, বিচারক, ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে মুরতাদ হওয়ার উল্লেখিত কারণগুলো পরিলক্ষিত হয়। এ জন্য বর্ণিত আয়াতাবলী থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা রয়েছে।

আয়াতাবলীর আমল:
১। একজন মুসলিম সর্বদা দীন বিধ্বংসী আমল থেকে নিজেকে সংরক্ষণ করবে।
২। কেউ উল্লেখিত দীন বিধ্বংসী আমল করার মাধ্যমে দীন থেকে মুরতাদ হলে দেশের সরকার তার উপর ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করবে।
৩। নিজের অজান্তে ইসলাম বিধ্বংসী কোন কাজ করে ফেললে, কালক্ষেপণ না করে সাথে সাথে তাওবা করবে।

Leave a Reply

error: Content is protected !!